দুধে মাত্রাতিরিক্ত সিসা

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আবারো তরল দুধে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে- যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সরকারের মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআই যে ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধকে জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলছে, তার ১১টির নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়ার কথা হাইকোর্টকে জানিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা দুধের নমুনায় ক্যাডিমিয়ারের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে বলা হয়, ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে হবে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তার গবেষণায় দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলাতে তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। এবার আমরা স্পষ্ট হলাম, তরল দুধের নামে আমরা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত যে দুধ পান করছি তা মানসম্মত নয় এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তরল দুধ মানবজীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুদের এটা প্রিয় খাদ্য। সেই দুধ যদি মানসম্মত না হয় এর চেয়ে দুঃখ ও হতাশাজনক সংবাদ আর কী হতে পারে। জীবন ধারণের জন্য যে খাদ্য মানুষকে গ্রহণ করতে হয় প্রতিনিয়ত, সেই খাদ্যেই যদি পাওয়া যায় জনস্বাস্থ্যের জন্য অতীব ক্ষতিকর ডিটারজেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানান রাসায়নিকের উপস্থিতি তা হলে আমরা আস্থা রাখব কোথায়। আসলে খাদ্যসংক্রান্ত আস্থার জায়গাতে ধস নেমেছে অনেক আগেই। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য প্রতিটি ভোগ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, তরিতরকারি, শাক-সবজি ফলমূল মশলা সর্বত্র ভেজাল আর ভেজাল। পণ্য অনুযায়ী কার্বাইড, ফরমালিন, তুঁতে, এমনকি ধোঁয়া ও অদ্যাবধি বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহারের কথা সবাই জানে। যে কারণে পণ্যমান রয়েছে প্রবল ঝুঁকিতে। দেশে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সংকট রয়েছে। মাথাপিছু দুধ-ডিম-মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতিও রয়েছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিশেষ করে গবাদিপশু, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করে মেটাতে হয় স্থানীয় চাহিদা। দুধের চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। জাতীয়ভাবে তরল দুধের প্রাপ্যতাও সীমিত, দামও বেশি। বিশেষ করে নগর জীবন পাস্তুরিত দুধের ওপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে যদি খাদ্যে ভেজাল থাকে, তাহলে জনগণ কী খাবে, কী পান করবে আর কী বা করবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন? যারা খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে প্রতিনিয়ত জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি। ঢাবি গবেষকরা বলেছেন, 'আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছি সেগুলো মানুষের ব্যবহারের জন্য। মানুষ ও প্রাণির অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক প্রাণির ওপর ব্যবহার বন্ধ করা দরকার।' শেষ পর্যন্ত তাদের গবেষণা সত্য প্রমাণিত হলো। এবার কী বলবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সরকারকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। বাজার থেকে মানহীন পণ্য অপসারণের পাশাপাশি, এ বিষয়ে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দায়ীদের কঠোর সাজার আওতায় আনতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার এ ব্যাপারে দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ নেবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।