আলোকিত সমাজ কোন পথে!

পৃথিবী এগোচ্ছে, আমরাও এগিয়ে যাব। এগিয়ে যেতে অবশ্যই আলোকিত মানুষের আলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন অন্ধকার পরিহার করি, আলোর মাধ্যমে আলোকিত হই।

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী
ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কোন পথে আলোকিত হবে, সে কথা এখন গভীরভাবে ভাবার সময় হয়েছে। সমাজ দৌড়াচ্ছে লোভ আর লালসার দিকে। সামাজিক চাহিদা লোভ আর লালসার কোনো শেষ নেই। যে যেভাবেই হোক ইহকালীন ক্ষণজীবনের লালসা চরিতার্থ করতে অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে না। দুনিয়ার ক্ষমতা, সামাজিক আধিপত্য, অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমে সমাজকে কাবু করতে চেষ্টার কোনো ত্রম্নটি নেই। ব্যক্তি রাজনৈতিক ও দলীয় শক্তির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারে কারও কার্পণ্যতা নেই। নীতি-নৈতিকতার বাছবিচার বিলুপ্ত। অর্থ ও পেশিশক্তির জোরে যে কোনো ফোরামে প্রভাব বিস্তার হচ্ছে। আলোকিত মানুষ পর্দান্তরিত হচ্ছে। আলো দূরে সরে যাচ্ছে। আর অন্ধকারের বিস্তৃতি অবধারিত হচ্ছে। আলো আর অন্ধকার সমানে চলতে পারে না। অন্ধকার যেন জয় হচ্ছে। আর আলোকিত মানুষ ক্রমেই একাকী হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কী হবে এ সমাজের। সমাজ যদি আলোর সন্ধান না পায় তাহলে কীসের উপর সমাজ জাতি ঠিকে থাকবে। যুগে যুগে সমাজকে আলো দিতে আলোকিত মানুষের দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ ছিল। তাদের আলোচনা আর পরামর্শ ছাড়া কখনো ব্যক্তি সমাজ ঠিকে থাকতে পারে না। সমাজ চলতে হলে সমাজের কর্ণধার থাকতে হয়। রাষ্ট্রের পরিচালক ছাড়া কখনো সঠিকভাবে দেশ চলতে পারে না। একটি পরিবারের একজন আদর্শ নেতাই তার পরিবারকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা ছাড়া কখনো কোনো জাতি তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। যে পরিবার অথবা জাতি তার অনুগতদের জীবনের জন্য সঠিক কর্মপন্থা তৈরি করবে না সে জাতি কখনো তার উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে না। আমরা কোন উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি সেখানেই আমার কথা। আমাদের ছোট্ট দেশ, মাতৃভূমিটি জনসংখ্যার ব্যাপক চাপ আর কর্মসংস্থানের বিরাট যুদ্ধ সর্বদা তৈরি হয়ে আছে। জাতিকে সঠিক পথে পৌঁছাতে কী কী পরিকল্পনা রাষ্ট্রের রয়েছে সেটাও দেশের জনগণ পরিষ্কার না। একটি জাতি আদর্শিক নীতি-নৈতিকতায় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও স্বাধীন হিসেবে জীবন পরিচালনায় কী কী রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি আছে, সেটা জাতির সামনে পরিষ্কার নয়। শিক্ষিত, মেধাবী, অশিক্ষিত যুবক বিশাল যুবসমাজের আগামী দিনের কী ভবিষ্যৎ সবকিছু ধোয়াশার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। যুবসমাজ অথবা রাষ্ট্রীয় সমাজ কীভাবে পরিচালিত হবে সঠিক দিক-নির্দেশনার কী পন্থা সেটাও দেশের জনগণ বুঝে নিতে পারছে না। শিক্ষার কী উদ্দেশ্য এবং তার বাস্তবায়ন কোন পথে সবকিছু আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। আসলে সব দেশ ও জাতির একটা সঠিক দিক-নির্দেশনা ও উদ্দেশ্য পাওয়া যায়। আমাদের এ জাতির কি ভবিষ্যৎ কি পরিকল্পনা কোনোটাই দেশের জনগণ পরিষ্কার নয়। এ দেশের যুবসমাজের সামনে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ অনিবার্য অন্ধকার। আলোর কোনো সন্ধান সমাজ দিতে পারছে না। সমাজের কর্তা নেতা পরিচালক তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে অনুগত বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি জাতিকে সেটাই দেখাচ্ছে। আদর্শের কথা পুস্তকে থাকলেও সেটার বাস্তবায়ন দলীয় ফোরামে হয় না। যে যার চেয়ে বেশি পেশি ও অর্থশক্তি প্রদর্শন দেখাতে পারে সে-ই হয়ে যায় বড় নেতা অথবা দলের চিফ। দেশ ও দল পরিচালনায় কোনো আদর্শের হিসেব খুঁজে পাচ্ছি না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় আদর্শিক গুণগত কোনো মান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো দলের মধ্যে। জাতীয়ভাবে আমরা কী আদর্শের অনুসারী তাও পরিষ্কার হয়ে জাতির সামনে পরিষ্কার নয়। দলীয় নেতারা বললেও দলের প্রতিষ্ঠাতার আদর্শ অনুসরণের কথা, বাস্তবে সেটাও তাদের মধ্যে মিল পাওয়া যায় না। কোরআন সুন্নাহভিত্তিক যেসব দল ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার কথা বলে তাদের মধ্যেও সঠিকভাবে কোরআন সুন্নাহর আদর্শ পাওয়া যায় না। একদল আরেক দলের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সেখানে ক্ষমতার অর্থের লড়াই দেখা যায়। এসব লোভ আর লালসার মধ্যে এ দেশের রাজনীতি সমাজ, পরিবার সবকিছু আজ কলুষিত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত। প্রশ্ন হচ্ছে আলো কোন পথে। কে দেবেন আলোর সন্ধান। কোথায় পাওয়া যাবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করতে দিক-নির্দেশনা সেখানেই লেখকের কথা। যারা লেখেন সমাজকে উদ্দেশ্য করে, যাদের বক্তব্য আসলে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তাদের কথাগুলো রাষ্ট্রের কর্তারা কীভাবে মূল্যায়ন করেন সেটাও চিন্তার কারণ। আলোকিত মানুষের দিক-নির্দেশনা সমাজ, রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীনরা গ্রহণ না করলে সে সমাজ নির্ঘাত অন্ধকারে ধাবিত হবে, সেখানে কোনো সন্দেহ নেই। যারা লেখেন বলেন তারা নিজের জন্য নয়, বরং দেশ, জাতি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্যই এ দায়িত্ব পালন করেন। তাদের কথা রাষ্ট্রকে শুনতে হবে। তাদের পরামর্শে দেশ, সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলে সমাজ সঠিক পথে চলবে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবে। আলোকিত মানুষের কথা না শুনলে তাদের দিক-নির্দেশনা মানা না হলে সমাজকে অবশ্যই একদিন সে খেসারত দিতে হবে। তখন আর সমাজকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। আমরা কী তাহলে জাতীয়ভাবে সে সমস্যায় সম্মুখীন? যদি তাই হয়, এখনি আমাদের সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখনি আমি, আমরা সবাইকে নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জাগ্রত হতে হবে। কী নৈতিকতা অর্জন করব সেটা নির্ধারণ করতে হবে। কোন পথে নৈতিকতা অনুশীলন হবে সে পথে যাত্রা থাকতে হবে। নৈতিকতার অনুশীলন আর বাধ্যবাধকতা পরিবার, সমাজকে অবশ্যই ধারণ করতে হবে। ক্ষমতা আর ক্ষমতার বাইরে নৈতিকতার ব্যাপক চর্চা করতে হবে। অবক্ষয় প্রতিরোধে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত অনুশীলন চর্চা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে অনৈতিক চর্চার মোকাবিলায় কঠোর হতে হবে। আজকের সমাজে যা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা হচ্ছে অনৈতিক চরিত্র। লোভ-লালসা আর ক্ষমতার মোহ। এসব চরিত্র ধ্বংস করে নৈতিক আদর্শ তৈরির সেক্টরগুলোকে সচল করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার কারিগর ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপকভাবে অ্যাকটিভ করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এখনিই তা করতে হবে। অন্যথায় আমরা সেই জাহিলি যুগের আদর্শে প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগবে না। আধুনিক পৃথিবীর সবকিছুর আলো-বাতাসে বাস করে চরিত্র ও মননে কখনো আমরা জাহিলি যুগে প্রবেশ করতে পারি না। যে যুগে নারী-পুরুষ আর ইজ্জত আব্রুর সম্মান ছিল না সে যুগে আমাদের প্রবেশ নয়। পৃথিবী এগোচ্ছে, আমরাও এগিয়ে যাব। এগিয়ে যেতে অবশ্যই আলোকিত মানুষের আলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন অন্ধকার পরিহার করি, আলোর মাধ্যমে আলোকিত হই। মাহমুদুল হক আনসারী: গবেষক, প্রাবন্ধিক