ওয়াসার দুর্নীতি রোধে সুপারিশ

যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হোক

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিষয়টি বহুল উচ্চারিত। ওয়াসাও এর বাইরে নয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ওয়াসার ১১টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ১২টি সুপারিশও প্রতিবেদন আকারে জমা দিয়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। প্রতিবেদন জমা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, ওয়াসার ১১টি খাতে দুর্নীতি হয় বা হতে পারে বলে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এটা সরকারের অর্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ১৪তম প্রতিবেদন। খবর অনুযায়ী, মিরপুরে ৫২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ৫২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। কাজের মান ও পরিমাপের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসূত্র করে এই অনিয়ম হয়েছে। ঢাকা মহানগর পানি সংগ্রহ প্রকল্পে ৫৫২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে। দুর্নীতির কয়েকটি খাত উলেস্নখ করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কাজগুলো ওয়াসার কর্মকর্তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে বা এ সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওভারটাইম না করেই বিল নেয়। ঠিকাদারদের তাদের কাজের চেয়ে বেশি টাকা দেয়া হয়েছে। এভাবে ১১ খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। দুদক বলছে, ঢাকা ওয়াসার আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকসমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে ওই প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্ত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিশন ওয়াসার দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করে। দলটি অনুসন্ধানকালে ওয়াসার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যসহ ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতাদের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বিবৃতি, নিরীক্ষা ও অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেই ওয়াসার দুর্নীতির উৎস ও ক্ষেত্র চিহ্নিত করে। পাশাপাশি তা প্রতিরোধে সুপারিশমালা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করে। তথ্য অনুযায়ী, ১১টি উৎসের মধ্যে প্রকল্পকাজে দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ৮টি। আমরা মনে করি, দুদকের এই পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ অমূলক হতে পারে না। কেননা, ওয়াসার দুর্নীতির বিষয়টি বহুবারই পত্র-পত্রিকায় এসেছে। ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন করে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নেয়া হয় 'ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপস্নাই প্রকল্প।' ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা। বাস্তবতা হলো, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশ। উদ্বেগের যে, ইতোমধ্যে ঠিকাদারের হাতে চলে গেছে ২৩৮ কোটি টাকা। এভাবে অনেক প্রকল্পের সময়সীমা শেষের দিকে চলে এলেও ফলত তেমন কোনো কাজই হয়নি। এভাবে একটি দেশের সেবাখাত কিছুতেই চলতে পারে না, চলতে দেয়াও সমীচীন নয়। স্মর্তব্য যে, প্রধানমন্ত্রী বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা বলছেন। দুর্নীতি কমাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও বাড়িয়েছেন। এরপরও দুর্নীতি বন্ধ না হওয়া অত্যন্ত পরিতাপের। ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা তাদের গৃহীত প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়েই চলেছেন। এসব দেখে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, এসব দেখভালের যেন কেউ নেই! ওয়াসার অনেক কাজই অসমাপ্ত। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ও পদ্মা-যশোদিয়া প্রকল্পেরও অগ্রগতি নেই। মনিটরিং না বাড়ালে এভাবেই সব পড়ে থাকবে বলে মনে করে দুদক সংশ্লিষ্টরা। উলেস্নখ্য, দুদকের প্রতিবেদন আমলে নিয়েছি, দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারি আমাদের আশান্বিত করে। মূলত দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চাইলে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রম্নত আইনের আওতায় আনা আবশ্যক। পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে মিটার রিডিং, জনবল কাঠামো সুনির্দিষ্ট করা, বেতনের সঙ্গে ওভারটাইম বিলের সমন্বয় সাধনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন, ওয়াসার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার লক্ষ্যে গণমাধ্যম, দুদক, অডিট বিভাগসহ নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি বাড়ানো, গণশুনানির আয়োজনসহ দুদক যেসব সুপারিশমালা তুলে ধরেছে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এটি নিশ্চিত করা গেলে সরকারি সেবাখাতের এই ব্যাপক দুর্নীতি রোধে তা সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।