প্রিয়া সাহার বক্তব্যে তোলপাড়

সরকারের নিন্দা ও প্রতিবাদ

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্পর্কে প্রিয়া সাহার বক্তব্য প্রদানের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রিয়া সাহার কথোপকথনের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ট্রাম্পের কাছে উত্থাপিত প্রিয়া সাহার 'অভিযোগ' মিথ্যা ও বানোয়াট উলেস্নখ করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার মনে করে তার এই মিথ্যা ও কল্পিত গল্পের পেছনে বাংলাদেশকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য স্পষ্ট। প্রিয়া সাহার বক্তব্যের বিষয়ে ইতোমধ্যে ভিন্নমত ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এ ঘটনার পর প্রিয়া সাহার ঢাকার বাসার সামনে ঘটেছে বিক্ষোভের ঘটনা। ফেসবুকসহ নানান মাধ্যমে তীব্র নিন্দার ঝড় এবং ব্যাপক সমালোচনার কারণে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করা অমূলক নয়। তথ্য অনুযায়ী, প্রিয়া সাহা মার্কিন সরকার আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এরই একপর্যায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান লোক উধাও হয়ে গেছে। তার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। মুসলিম উগ্রবাদীরা এ কাজ করেছে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। এরপরও দেশে যে সাম্প্রদায়িক উসকানি এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নেই এমনটি বলা যাবে না। যে কোনো নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুরা টার্গেট হয়ে থাকে। এর দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পূর্ণিমা শীল ধর্ষণসহ সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনাগুলো। কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর, যশোরের পালপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সম্প্রীতির ক্ষেত্রে কলঙ্কজনক আঁচড় হয়ে আছে, এ বিষয়গুলোও বহুল আলোচিত। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, বাড়ি-ঘর দখলের বিষয়টিও কম আলোচিত নয়। অবশ্য সরকার এসব ঘটনায় কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সূত্র ধরে এসব বিষয়ও বিভিন্নভাবে আলোচনায় উঠে আসছে। আবার এও জানা গেছে, প্রিয়া সাহার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। তবে এটা ঠিক, প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির যে নজির রয়েছে তাতে ব্যাঘাত ঘটাল তা অত্যন্ত পরিতাপেরই জন্ম দেবে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ করেছেন তা তার নিজস্ব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত। প্রিয়া সাহা এই এই সংগঠনের ১১ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের একজন। ওয়াশিংটনের ওই সম্মেলনে সংগঠন থেকে তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছে, সেখানে প্রিয়া সাহার নাম ছিল না। অন্যদিকে মার্কিন গণতন্ত্র, রাজনৈতিক ও মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন ফ্রিডম হাউস ২৭ প্রতিনিধির যে তালিকা তুলে ধরেছেন তাতে ১৮ নম্বরে প্রিয়া সাহার নাম রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার করা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তিনি কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া সর্বশেষ কোন কোন দেশে এবং কী কারণে তিনি গিয়েছেন- সে সব তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার নেপথ্যে দেশি-বিদেশি কারও ইন্ধন আছে কি-না, সেটিও পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ঢাকায় দুটি মামলা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটেও পৃথক মামলা হয়েছে। সর্বোপরি, দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এমন কর্মকান্ডে জড়িত থাকা ঘৃণ্য অপরাধ। প্রিয়া সাহার অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্তে তিনি দায়ী হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই গণ্য করতে হবে। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হতে পারে- সংখ্যালঘুদের এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকার বিকল্প নেই।