সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক
আমরা প্রায়ই দেখেছি, দেখি, মার্কিনী বা বিদেশিদের কাছে দেশের বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ ও নালিশ রেখে গেছেন খালেদা জিয়াসহ আরও অনেকে, এমনকি লিখিতভাবেও অনেককে অনেক কথা জানাতে দেখেছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সেসব নিয়ে কোনো তদন্ত/মামলা হয়েছে কি?
প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
রণেশ মৈত্র
সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর জন্য মহানন্দের ব্যাপার হলেও ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে রক্তস্রোতে পবিত্র হয়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধান সর্ববাদী সম্মতভাবে গৃহীত হলেও শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী বিরাজমান সাম্প্রদায়িকতা নামক দুষ্টগ্রহটি কিছুতেই যেন বাঙালির পিছু ছাড়ছে না। তাই বলতেই হয় ওই দুষ্টগ্রহটি বেশ প্রবলই বটে আজও বাংলার মাটিতে।
এ প্রসঙ্গে অতীতে অনেকবার কলম ধরেছি। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তীক্ষ্ন ভাষায় বক্তৃতা করে সেই ১৯৫২ সাল থেকে মাঠ কাঁপিয়েছি। লেখনীর তীক্ষ্নতা আর নৈতিক দৃঢ়তাকে সম্বল করে দীর্ঘ বক্তৃতা করে একদিকে যেমন মাঠ কাঁপিয়েছি- তেমনি আবার সুনিশ্চিত ও দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে অস্ত্র সজ্জিত দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে বিশাল জনসভা ও উচ্চকিত স্স্নোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে মিছিল বের করে ওই দাঙ্গাবাজ অস্ত্রসজ্জিত গুন্ডাদের বাস্তবে প্রতিরোধও করেছিলাম একাধিকবার এবং তা পাকিস্তান আমলে যখন রাষ্ট্রটিই ছিল ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী।
আমি কি একাই এ কাজ করতে সমর্থ হয়েছিলাম? তা কি আদৌ সম্ভব ছিল সেদিন? না, একা নই, বহুজন অর্থাৎ হাজার হাজার মানুষকে একত্রিত করে তাদের নিয়ে।
এই যে হাজার হাজার মানুষকে সে দিনগুলোতে সমবেত করতে পেরেছিলাম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিশ্বাসে তারা কারা? দ্বিধাহীনভাবে বলছি, ওই মিছিলগুলোর কি সংগঠক কি অংশগ্রহণকারী তাদের অন্তত ৯৫ ভাগই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত যারা সাম্প্রদায়িকতাকে সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে ঘৃণা করতেন চরমভাবে প্রতিরোধ করতেও এগিয়ে আসতেন সক্রিয়ভাবে। এখন প্রশ্ন জাগে ( যা এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি) তখনকার ওই হাজার হাজার মুসলিমরা তবে কি কোনোভাবে কম মুসলমান ছিলেন? বা তারা কি তবে কাফের ছিলেন? কিম্বা তারা জামায়াতী ভাষায় 'ভারতের বা হিন্দুদের দালাল' ছিলেন?
প্রশ্নগুলো আজকের বাস্তবতায় বড্ড বেশি প্রাসঙ্গিক।
শেষবার যখন সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে লিখেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে, তখন ভেবেছিলাম অতঃপর এ বিষয়ে আর লিখব না ধারণা ছিল লিখতে হবেও না।
কিন্তু বিধি বাম। তাই কাগজ-কলম হাতে তুলে নিতেই হলো সম্পূর্ণ নতুন এক প্রেক্ষিতে।
একজন অসাম্প্রদায়িক মহিলার নাম প্রিয়া সাহা, কোনোদিনই তার সঙ্গে পরিচয় ঘটেনি ঘটার সম্ভাবনাও নেই- তিনি দেখি ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ও সংবাদপত্রগুলোর মাধ্যমে রীতিমতো দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলেছেন। বাধ্য হয়ে আমাকেও একটি পোস্ট দিতে হলো এবং নিজেই তা শেয়ার করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়েও দিলাম।
কিন্তু ফেসবুকের পোস্টের চেয়ে সংবাদপত্রের নিবন্ধের মূল্য ও শক্তি অনেক বেশি। তাই পত্রিকায় প্রকাশের বা অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশের লক্ষ্যে এই নিবন্ধটি লিখতে বসেছি। প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা যারা নিবন্ধটি পড়বেন তারা যদি পক্ষে হোক বা বিপক্ষে হোক নিজ নিজ মন্তব্য লিখে পাঠান তবে খুবই উপকৃত হবো কারণ ভুলভ্রান্তির ঊর্ধ্বে তো আমরা কেউই নই। ভুল কিছু ধরিয়ে দিলে উপকৃতই হবো-সংশোধনের সুযোগও পাব।
প্রিয়া সাহা একটি সংগঠনের নেত্রী বলে জানি। মানবাধিকার সংগঠনের মতো সংগঠন সেটি। তবে তারা তাদের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বোধকরি সেই সংগঠনের সিদ্ধান্ত বা নিজ উদ্যোগ মোতাবেক তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং তার অশুভ পরিণতিতে কোটি কোটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের ব্যাপক হারে দেশত্যাগের বিষয় ট্রাম্পকে অবহিত করে এ বিষয়ে তার সহানুভূতি ও বাংলাদেশ সরকার যাতে বিষয়টি অবহেলা না করে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করে তাদের দেশত্যাগ বন্ধের ব্যাপারে সক্রিয় হন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
কথাটি প্রকাশ হওয়া মাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে সে কী আলোড়নই না উঠেছে যেন এক প্রবল ঝড় বইতে শুরু করেছে।
দেখে বিস্মিত হচ্ছি, শুনে অবাক হচ্ছি যে প্রিয়া সাহা নামক ওই মহিলা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে দেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের কথা তুলে ধরায় তিনি নাকি 'রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ করেছেন। বাংলাদেশকে আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রায় সিকি শতাব্দীজুড়ে অবিশ্রান্ত আন্দোলন ও সবশেষে নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে ৩০ লাখ নারী-পুরুষ-শিশুর আত্মদানের বিনিময়ে অর্জন করেছি। রক্তের দামে কেনা এই রাষ্ট্রটি কি এতই ঠুনকো যে একজন মহিলা এক বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে দেশের সাম্প্রদায়িক নির্যাতনসংক্রান্ত তথ্যাদি তুলে ধরলো অমনি রাষ্ট্রটি ভেঙে পড়ল? যারা ঝড় তুলেছেন তারা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রটিকে ঠুনকো বলেই চিহ্নিত করতে চাইছেন। এ অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে সন্দেহ নেই।
ব্যর্থ কিছুটা ইতোমধ্যেই তারা হয়েছেন। প্রিয়া সাহাকে তারা, যারা তার বিরুদ্ধে ঝড় তুলেছেন তারা প্রিয়া সাহাকে একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন-যা তিনি আদৌ ছিলেন না। এরকম আরও বহু ব্যর্থতা আসবে। তবে কিছুটা সময় অবশ্য নিতে পারে।
প্রিয়া সাহার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে যাওয়াকে আমি অবশ্য আদৌ সমর্থন করি না- যেমন কোনোদিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে বিরোধী দলে থাকাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা যখন ধর্ণা দিতে যান প্রতিদ্বন্দ্বীকে শায়েস্তা করার আবদার নিয়ে তখনো আমি তাদের এই প্রচেষ্টা বিরোধিতা করেছি। প্রিয়া সাহা যে তথ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দিয়েছেন তাও সামান্য অতিরঞ্জন বলে আমার কাছে মনে হয় তবে তা মারাত্মক কিছু নয়।
আসলে সরকারের কাছেই তো তথ্য রয়েছে কীভাবে কতজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু দেশান্তরিত হয়েছেন- সরংংরহম ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ-এ পরিণত হয়েছেন তা সরকারি দুটি কাগজ ঘাঁটলেই জানা যাবে। সরকার কি তথ্যগুলো প্রকাশ করবেন?
এক. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কতজন ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল? আর
দুই. ১৯৭৩-এর ভোটার তালিকায় তাদের সংখ্যা কত ছিল?
তিন. ২০১৮-র ডিসেম্বরের নির্বাচনের ভোটার তালিকায়ই বা কতজন ভোটার নির্দিষ্ট ছিলেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে?
এ ছাড়া জানা যেতে পারে ১৯৫১ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো আদম শুমারী হয়েছে তা থেকেও তো তথ্য পাওয়া যাবে। সরকার এসব তথ্যও প্রকাশ করবেন কি?
ফেসবুকে সম্প্রতি দুইপক্ষ থেকেই ঝড় তোলা হয়েছে। দেশত্যাগের কথা শুনে যারা তাকে মিথ্যা প্রচারণা বলে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন তাদের পক্ষ থেকে যেমন প্রথমে ঝড় তোলা হয়েছে তেমনই আবার তথ্য প্রমাণসহ অন্যরাও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টা ঝড় তুলে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে তৎপর হয়েছেন।
এমনই একটি তথ্য নিচে তুলে দিচ্ছি।
জনৈক সুমি খানের দেয়া পোস্ট থেকে জানা গেল-
'মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার কথোপকথন ভিডিওতে শুনলাম, নূ্যনতম ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে যা বুঝলাম তাতে করে মনে হলো প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা ছিল উদ্দেশ্যমূলক।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে যারা রাষ্ট্রদ্রোহিতা মনে করছেন আর তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে যারা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার খায়েশ রাখছেন, তারা বুঝিয়ে দিচ্ছেন সংখ্যালঘুদের জন্য কতটা বিপজ্জনক ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশ আজ বাংলাদেশে বিরাজমান।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘুদের একজন ভোটার হিসেবে প্রিয়া সাহাও কথা বলার সুযোগ পান। তিনি তার দেশের, এমনকি সংখ্যালঘু নিপীড়নে বিগত বা বর্তমান কোনো সরকারের বিপক্ষে কিছুই বলেননি। তিনি সময়কাল ধরেও বলেননি। ৩৭ মিলিয়ন মানুষ উঠে যাওয়ার কথা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত সমেত নিজ দেশে বসবাস করতে চেয়েছেন, বিচারহীনতার কথা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন।
আমরা প্রায়ই দেখেছি, দেখি, মার্কিনী বা বিদেশিদের কাছে দেশের বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ ও নালিশ রেখে গেছেন খালেদা জিয়াসহ আরও অনেকে, এমনকি লিখিতভাবেও অনেককে অনেক কথা জানাতে দেখেছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সেসব নিয়ে কোনো তদন্ত/মামলা হয়েছে কি?
প্রিয়া সাহা ভিটে-মাটি ছাড়া হয়েছেন আরও অসংখ্যের মতো। ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যলঘু উঠে গেছে, গেছেই তো। স্বীকার করতে লজ্জা লাগলে চলবে কেন। বিশদ তথ্যের দিকে তাকানো যাক।
বাংলাদেশে ১৯৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরে তা শতকরা ২২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ক্রমেই হিন্দুদের সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫ ভাগ, ১৯৭৮ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, ১৯৯১ সালে ১০% এ এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়গুলো হিন্দুদের হার কমে ৮ ভাগের নিচে নেমে এসেছে বলে অনুমিত হয়। ২০১১ সালে পরিচালিত জরিপ বলছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ হিন্দু বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে।
১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ দশকে ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আর প্রতিদিন দেশ ছাড়ছেন গড়ে ৬৩২ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারাকাতের 'বাংলাদেশে কৃষি ভূমি জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে উলেস্নখ করা হয়েছে, এই নিরুদ্দেশ প্রক্রিয়ার প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী দু'তিন দশক পরে এ দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোনো মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেন, হিন্দুদের প্রায় ২৬ লাখ একর জমি জবরদখলে রয়েছে। অর্পিত সম্পত্তি আইনের জেরে প্রতিদিন গড়ে ৬৩০ জন হিন্দু বাংলাদেশ ছাড়ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে অবৈধ ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সাধারণভাবে ভূমি দখল হিসেবে পরিচিত। এসব ক্ষেত্রে মালিকানাজনিত ব্যাপক বিরোধের কথা বলা হয়। বিশেষ করে হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এর শিকার হন।
এই তথ্যগুলোর পরে আর তেমন একটা কথা থাকার কথা নয়। সহজ কথায়, কোর্ট, কাচারি, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষক, শ্রমিক, কামার-কুমারদের অতীত ও বর্তমান সংখ্যার দিকে তাকালে এই দেশত্যাগের ভয়াবহতা চোখে পড়তে বাধ্য। লাখ লাখ একর দেবোত্তর সম্পত্তিই বা গেল কোথায়?
রাষ্ট্রদ্রোহিতা অবশ্যই অপরাধ। সর্বাপেক্ষা মারাত্মক অপরাধ যার শাস্তি মৃতু্যদন্ড হলেও তাতে আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে হবে যে অভিযুক্তকৃত অপরাধটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখি, আমরা সশস্ত্র যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনলাম। এটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। কিন্তু আইয়ুব সরকারের, ইয়াহিয়া সরকারের জিয়া সরকারের এরশাদ সরকারের বা খালেদা সরকারের বা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা বা নিন্দা করার অধিকার সংবিধানেই তো নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে প্রিয়া সাহা তাও করেননি। বিদেশে সরকারি কোনো গোপন তথ্যও প্রচার করেননি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অপরাধের খবর প্রতিদিনই তো আমাদের সংবাদপত্রগুলোয় প্রকাশিত হচ্ছে।
সরকার আর সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো প্রিয়া সাহা তথা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় প্রভাবিত হয়ে সরকার যদি যারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অহরহ ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেন তবেই প্রিয়া সাহা বা কাউকে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে আর কাউকে কিছু বলতে হবে না।
২০০১ সাল ও তার পরবর্তী সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে মামলা করে অপরাধীদের শাস্তির নিশ্চিত করা হোক। এতদিনেও কেন সে বিচার হয়নি তাও জনগণকে জানানো হোক।
রণেশ মৈত্র: সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত