বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এ বছরের বন্যায় দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২ হাজার ৩৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা ১ হাজার ৫৫৭টি এবং ৭৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১২টি জেলায় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪ হাজার ৩৩১টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০টি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে মাউশির অধীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় ৩২ কোটি ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষতির হিসাব নিরূপণে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুক সমান পানি। এতে চেয়ার, বেঞ্চসহ আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণের ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থীরাও দুশ্চিন্তায় আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা পরে নেয়া হবে। তথ্য মতে, এবারের বন্যায় কুড়িগ্রামে সবচেয়ে বেশি- ২২৪টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত। এরপর বেশি ক্ষতি হয়েছে গাইবান্ধায়। এ জেলার শুধু সুন্দরগঞ্জেই ৪৫টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে। অপরদিকে মাউশি সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৫৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া রংপুরে ৫২৯টি, সিলেটে ২৫২, রাজশাহীতে ১৩৫, চট্টগ্রামে ৩৬ এবং ঢাকা অঞ্চলে ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বলাই বাহুল্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি আঘাত হানে বাংলাদেশে। আর এবারের বন্যা নদীতীরবর্তী মানুষের সক্ষমতাকে আঘাত করেছে। বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। গবাদিপশু, হালের বলদ স্থানাভাবে ও খাদ্য সংকটে জলের দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। আমরা মনে করি, এসব মানুষের সক্ষমতাকে ফিরিয়ে দিতে জরুরি কর্মসূচি নিতে হবে। রাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন কাজের পরিকল্পনা হতে হবে যুগপোযোগী। বিশেষ করে, বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে থাকা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রদের বইপত্র বিনষ্ট হয়ে থাকলে তাদের নতুন করে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করাও জরুরি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত দ্রম্নত সম্ভব সংস্কার ও মেরামতে পাঠদানের উপযোগী করে তুলতে হবে। আমরা মনে করি, সরকারের পরিকল্পিত কার্যক্রমই ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর সহায়ক শক্তি। পাশাপাশি নদী সংক্রান্ত নিরন্তর দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে মনোযোগ দেয়াও আবশ্যক। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর তলদেশ ভরে ওঠার ফলে অল্প পানিতেও নদীতীরবর্তী এলাকা ডুবে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। এ জন্য নদী খনন অগ্রাধিকারভাবে করা জরুরি। নদীরতীরকে স্থায়ী অবকাঠামোর আকারে শাসনের মধ্যে নেয়া যেতে পারে। নদী কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করে ছোট-বড় নদীর প্রবাহকে নিয়মিতকরণ, অপদখল ও নদীদূষণ দূর করাও অপরিহার্য। নদীকে মেরে ফেলে কষ্টের সমাধান হবে না। নদীর পৃথক সত্তাকে মেনে নিয়েই আমাদের উন্নয়ন পরিকাঠামোসহ সব উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে, বন্যা শেষ হলে যত দ্রম্নত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কার ও মেরামত কাজ শুরু করা দরকার। আমরা জানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপদকালীন সংস্কার কাজের জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রয়েছে। ফলে এসব অর্থের সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার্থীরা যাতে দ্রম্নততার সঙ্গে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারে, সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা তার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।