মানহীন মশার ওষুধ

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিবছর রাজধানীর মশক নিধনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও তা যে কোনো কাজেই আসে না, তার প্রমাণ মিলেছে এ বছরও। ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর আগমন ঘটলেও দীর্ঘ ২০০০ সাল থেকে চলতি বছরের মতো এত আক্রান্তের সংখ্যা ঘটেনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৭ মাসে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভ লেখা পর্যন্ত সরকারি হিসাবে সর্বাধিক ১৭ হাজার ১৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১৪ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবছর মহামারী আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন সতর্কবাতা আমলে না নেয়ার কারণেই রাজধানীজুড়ে ডেঙ্গুর এই প্রকোপ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবশ্রেণি পেশার মানুষেরই মৃতু্য ঘটছে। উদ্বেগের যে ঢাকার বাইরের ৬২ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষই এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত আতঙ্কজনক হিসেবে সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, অভিযোগ রয়েছে- ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা আমলে নেয়নি ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন। মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ প্রয়োগ এবং ডেঙ্গুর বিস্তার অস্বীকার করাসহ এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের লুকোচুরির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেসরকারি হিসাবে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, প্রতিবছর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মানহীন মশার ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর এ অবস্থা চলছে দেড় যুগ ধরেই। উলেস্নখ করা যেতে পারে, ২০০০ সালে লিমিট এগ্রো প্রোডাক্ট কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান অবিভক্ত সিটি করপোরেশনে মশার ওষুধ সরবরাহ করে। তখন থেকেই ওই ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পর বিভিন্ন সময়ে ওই মশার ওষুধ আটবার ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় এবং প্রতিবারই তা মানহীন বলে প্রমাণিত হয়। কোম্পানিটি গত ১৮ বছরে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার মানহীন ওষুধ সরবরাহ করলেও কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বছরও মশা নিধনে ওষুধ এবং সরঞ্জামাদি কেনাকাটার ৫০ কোটি টাকা পানিতে গেছে। প্রশ্ন হলো, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ এভাবে আর কতদিন নষ্ট হবে? ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এতদিন ধরে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে কাদের স্বার্থে? বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষই এখন বিচলিত। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত রোগীদের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রায় প্রতিদিনই মৃতু্যর খবর আসছে। সম্প্রতি পুলিশের এসআইসহ তিনজনের মৃতু্য ঘটেছে। এসবের পেছনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর অবহেলাকে বড় করে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, রাজধানীতে মশা নিধনের কার্যক্রম কখনই জোরদার ছিল না। পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করলেও কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে সজাগ হয়নি। এখনো মশা নিধনের যে সমন্বিত কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি উইং রয়েছে। তাদের নজরদারির ক্ষেত্রেও গাফিলতির চিত্র স্পষ্ট। মূলত মশা নিধনে ব্যর্থতার কারণেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি। আর এর জন্য দায়ীদের ছাড় দেয়া উচিত নয়। কেননা, কর্তব্য-কর্মে গাফিলতির দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুতেই এড়াতে পারেন না। স্মর্তব্য যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, এবার এডিস মশার বংশবিস্তার বেশি হবে। সে জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার কথা থাকলেও সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নেয়নি। বিশেষজ্ঞরা মশার ওষুধ মানহীন বললেও তাতে আস্থা রাখা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পর পরই মশার উৎপাদনস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়নি। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মশা নিধনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে কীটতত্ত্ববিদদের ভূমিকা বেশি। কিন্তু সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। মশা নির্মূলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এতে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিই স্পষ্ট হতে পারে। আশার কথা যে, পরিস্থিতি বিবেচনায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে চিকিৎসক-নার্সদের পকেটবুক আকারে জাতীয় চিকিৎসা গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় ফি বেঁধে দেয়া হয়েছে। মশা নিধনের কার্যকর ওষুধও আমদানি করা হচ্ছে। এসবই ইতিবাচক। সংশ্লিষ্টরা সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিক এটাই প্রত্যাশা।