কাঁচা চামড়া রপ্তানি

দ্রম্নত বাস্তবায়ন হোক

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এ কথা বলা দরকার, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রশ্নে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চামড়া শিল্প অন্যতম। চামড়া, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্র আয় করা সম্ভব। প্রসঙ্গত বলা দরকার, স্থানীয় শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সাধারণ মানুষ ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কতটা উপকৃত হতে পারেন- এসব বিষয়ে অস্পষ্টতার মধ্যেই দেশে প্রথমবারের মতো কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে মানুষ যে দাম পাচ্ছে, সেটা 'যৌক্তিক না'। মানুষ যেন ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করতেই সরকারের এ পদক্ষেপ। তবে রপ্তানির সুযোগ হলে আর ট্যানারিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না- এই আশায় কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও- চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা উৎপাদন শিল্প ও প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে দেশে এসব শিল্পের কাঁচমালের সহজলভ্যতা কমে যাবে, তাতে হুমকির মুখে পড়বে পুরো শিল্প। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং বাস্তব পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। চামড়ার মতো সম্ভাবনাময় শিল্পে যদি কাঁচামালের সহজলভ্যতার ঘাটতি হয় তবে তার প্রভাব যেমন বিবেচনা করা জরুরি, তেমনিভাবে চামড়ার অযৌক্তিক দাম হবে এটাও কাম্য নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। সরকারি হিসাবে এবারেও প্রায় সোয়া কোটি পশু জবাই করা হয়েছে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। আর এ সময়ই সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। নূ্যনতম কোন দামে তারা সেই চামড়া কিনবেন তা ঈদের আগে ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু উলেস্নখ্য, সোমবার ঈদের বিকাল থেকেই চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার খবর সামনে আসে এবং ফড়িয়া আর মৌসুমিরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নামমাত্র দামে চামড়া কিনেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চামড়া শিল্প দেশের সম্ভাবনাময় একটি শিল্প আর এটাকে এগিয়ে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। সঙ্গত কারণেই একদিকে যেমন কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টি আমলে নিতে হবে, তেমনি কাঁচা চামড়ার দামের বিষয়টিও ভাবতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিবৃতিতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে এবং বলা হয়েছে যে, উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়ায় পাইকার ও আড়তদাররা কতটা লাভবান হবেন- এটা ভাবনার অবকাশ রাখে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন 'আগে চামড়া রাস্তায় পড়ে থাকত, ন্যায্য দামে বিক্রি হতো না। এখন আড়তদাররা ট্যানারির কাছে বিক্রির আশায় বসে না থেকে নিজেরাই সেটা রপ্তানি করবে।' ফলে চামড়া-সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক- এমনটি কাম্য।