ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনা

সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্য রোধ করুন

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ৩৮ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। নিহতদের মধ্যে রাজধানী ঢাকা, দিনাজপুর ও কুমিলস্নায় চারজন করে; বগুড়ায় ও কুষ্টিয়ায় তিনজন করে; গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, লক্ষ্ণীপুর ও গোপালগঞ্জে দু'জন করে; নাটোর, রংপুর, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, ভোলা, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মাদারীপুর, মৌলভীবাজার ও খুলনায় একজন করে নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ১০৭ দিনে সড়কে ৯৮৫ জনের প্রাণহানির যে তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া সংবাদপত্র খুললে প্রতিনিয়তই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার খবর দেখতে পাওয়া যায়। প্রশ্ন হলো, সড়কে-মহাসড়কে মৃতু্যর এই বিভীষিকা কি চলতেই থাকবে? সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, আহতদের অঙ্গহানি ও যানবাহনের ক্ষতি হলো সরাসরি প্রভাব। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত একেকটি মানুষের সঙ্গে জড়িত একেকটি পরিবারও এ ক্ষতির শিকার। সুতরাং বিপুল ও বহুমুখী এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা যে যৌক্তিক, তা নানানভাবেই আলোচিত। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে এর কারণগুলো জানা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করলে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো মূলত সড়কের গঠনসংক্রান্ত এবং যানবাহন ও চালকসংক্রান্ত। গণমাধ্যমে উঠে আসা সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলেও এর যথার্থতা মেলে। এ ছাড়া যানবাহন চলন্ত অবস্থায় চালকের মুঠোফোন ব্যবহার এবং বেপরোয়া মনোভাবের কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার বিষয়টিও সামনে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তিন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। ওভারস্পিড, ওভারটেকিং, যান্ত্রিক ও রাস্তার ত্রম্নটি। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস না পাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। চালকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ, গাড়ির অনুমোদন, সড়কের ত্রম্নটি, সঠিক তদারকির অভাবসহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে গলদ। উলেস্নখ করা যেতে পারে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবায়ন গতি খুবই কম। এ নিয়ে প্রতি বৈঠকে হইচই হয়। কিন্তু কাজ হয় না। এটি এখন আনুষ্ঠানিকতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য মতে, মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের বেপরোয়া গতি। দেশের এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়াও অমূলক নয়। জানা যায়, 'ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন পস্ন্যান' রয়েছে সরকারের। বাস্তবতা হলো, এখনো সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কে ২৬০টির বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আজও সরলীকরণ হয়নি। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। আবার দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকেরও বিচার হয় না। এই প্রেক্ষাপটে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে সত্যিই কঠিন তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। আবার এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারের পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা রোধ না হওয়া অত্যন্ত পরিতাপের। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনা কেন রোধ হচ্ছে না তার সুস্পষ্ট কারণ নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে জাতিসংঘ ঘোষিত ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর জন্য আইনের কঠোরতাও জরুরি। বলাই বাহুল্য, চালক-মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব পরিবহন খাতকে দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে। সরকার সড়ক নিরাপত্তায় জনবান্ধব যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলেও তারা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর সব মিলিয়ে এহেন পরিস্থিতি সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে হাজির হয়েছে। এর অবসান জরুরি। এ জন্য সরকারকেই কঠোর হতে হবে। উন্নত দেশগুলোর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিকল্পনার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। সড়ক-মহাসড়কের এই মৃতু্যর মিছিল যেভাবেই হোক থামাতে হবে।