রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবাহ

এ ধারা অব্যাহত থাক

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স ১৬০০ কোটি ডলারের বেশি ছিল। এ ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত আছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা দেয়ার কারণেই প্রবাসী আয়ের এ ধারা অব্যাহত আছে। গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূত অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে অবৈধ এসব কার্যক্রম বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরতা এবং প্রণোদনা চালু করার কারণেই বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম প্রবাসী আয়, ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির এ ধারা ইতিবাচক হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৯৬ শতাংশই এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৭ সাল ছিল প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এক উজ্জ্বল বছর, যা অব্যাহত ছিল ২০১৮ সালেও। গত বছর সারা বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর এর পরিমাণ আরও চার শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশাবাদ রয়েছে সংস্থাটির। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো উপকৃত এবং উন্নত হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের তালিকায় শীর্ষে আছে ভারত, দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় ফিলিপিন্স ও চতুর্থ মেক্সিকো। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। আবার বিশেষজ্ঞরা এও আশঙ্কা করছেন যে, এই অবস্থা আর বেশিদিন থাকবে না। কেননা উন্নত বিশ্বে দক্ষ ও প্রযুক্তিভিত্তিক জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নত শিল্প-কারখানাগুলোতে শ্রমিকের স্থান দখল করে নিচ্ছে রোবট ও কম্পিউটার। সুতরাং এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশেরও যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, প্রবাসী আয় যত বাড়বে ততই আমাদের দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। স্মর্তব্য যে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালেও ভাঁজ ফেলেছিল। এই খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছিল ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। সুতরাং রেমিট্যান্স বাড়াতে নতুন নতুন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া সমীচীন। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতে হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী দেশ মনে করছে বিশ্বের অনেক দেশই। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিও বেশ ভালো, প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। বিদু্যতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। আমরা মনে করি, উৎপাদনশীল খাতে প্রবাসী আয়ের কার্যকর বিনিয়োগ বেগবান করারও উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। মনে রাখা দরকার বিশ্ব এখন প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে ফলে যুগের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানিতে গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব আছে। দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও সেই অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি হয়নি। জনসংখ্যা অনুপাতে আমাদের দেশে যেই পরিমাণ প্রকৌশলী, ডাক্তার, নার্স, প্রযুক্তিবিদ, আইটি বিশেষজ্ঞ, এমনকি বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক প্রয়োজন, সেই পরিমাণে বিশেষজ্ঞ নিদেনপক্ষে দক্ষ মানবসম্পদ নেই। ফলে টেকসই উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ জোর দেয়া দরকার। আগামীতে যাতে প্রবাসী আয় কমে না যায় তার জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। দেশের সমৃদ্ধির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।