বাড়ছে সীমান্ত হত্যা

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে, এরপরও সেটা বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে বলে যখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে- তখন এর ভয়াবহতা আমলে নেয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার যে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৪ জন। আমরা বলতে চাই, বহু দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও যখন সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না, বরং বাড়ছে; তখন এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সীমান্তে চোরাচালান নৈমিত্তিক ঘটনা এবং এর সঙ্গে উভয় দেশের নাগরিকই জড়িত এমন বিষয় জানা গেলেও, বাংলাদেশের নাগরিকরা বারবার হত্যাকান্ডের শিকার হয় যা অত্যন্ত পরিতাপের। আমরা বলতে চাই, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র কিন্তু এরপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। যা আমলে নিয়ে এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এটাও আমলে নেয়া সমীচীন যে, সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে এমন বিষয় উঠে এসেছে- দেশের বেসরকারি দুই মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও অধিকার বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন বাংলাদেশি। এর বাইরে আরও দুজন বিএসএফের নির্যাতনে মারা গেছেন। এর মধ্যে গত ১০ মে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তের কাছে কবিরুল ইসলাম নামের একজনকে পায়ুপথ ও মুখে পেট্রল ঢেলে হত্যা করেছে যা পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে এবং একের পর এক যখন সীমান্তে হত্যাকান্ড ঘটছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব এর সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের নাগরিকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে জরুরি চিকিৎসাসেবা, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া এবং পণ্য ক্রয়ের মতো বিষয় আছে। আর শুধু সীমান্ত অতিক্রম নয়, জিরো লাইনের কাছে ভুলক্রমে চলে যাওয়ার কারণেও বাংলাদেশের নাগরিকরা হত্যার শিকার হয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হত্যার শিকার হওয়ায় অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া আমরা এটাও বলতে চাই, যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু তা না করে হত্যা কিংবা শারীরিকভাবে আঘাত করা হবে এটা হতে পারে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নানা ধরনের উদ্যোগ আলাপ-আলোচনার পরও সীমান্তে হত্যা বাড়ছেই- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে যা নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা মনে করি, কেন সীমান্তে হত্যাকান্ড ঘটছে সেটা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার পথ খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে আরও বেশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।