বঙ্গবন্ধু মানেই আলোকিত বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মফিজুল ইসলাম সৌরভ শিক্ষার্থী (ইংরেজি বিভাগ) সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজ, মাদারীপুর
'বঙ্গবন্ধু মানেই আলোকিত বাংলাদেশ' কথাটি অর্থে দুটি শব্দ বঙ্গ ও বন্ধু, 'বঙ্গ' শব্দটি এসেছে বাঙ্গাল থেকে যা পরিবর্তন হয়ে এসেছে বাঙ্গালি আর 'বন্ধু' হলো গভীর সম্পর্ক। 'বঙ্গবন্ধু' শাব্দিক অর্থ গুণ অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় বাঙ্গালি জাতির সঙ্গে গভীর সম্পর্কের একজন ব্যক্তি। ইতিহাস থেকে বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্টুনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নামের আগের 'বঙ্গবন্ধু' নামটি সংযুক্ত করা হয়েছে; অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলো বাংলার প্রতিটি নাগরিক, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, বৈষম্য ও নিজের জীবন উৎসর্গ করে অন্ধকারাচ্ছন্নতার যুগ থেকে একটি আলোকিত দেশগড়ার কারিগর। 'মানুষ বয়সে বাঁচে না, বাঁচে কর্মের' পার্থিব জীবনে মানুষ তার কাজের মধ্যদিয়ে হয়ে ওঠেন মহান, চিরস্মরণীয় ও বরণীয়। পৃথিবীতে অজস্র মানুষের আসা-যাওয়া চলেছে। কিন্তু কাজই মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। যখন কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা সংগঠন জনগণের প্রত্যাশা বা চাহিদা পূরণের নিজের সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে অবিরত কাজ করে, তখন তিনি হয়ে ওঠেন সবার কাছে জনপ্রিয় পরিণত হয় জনগণের নেতায়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টিকরণ এমন একজন জননেতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার স্বায়ত্তশাসন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও শোষণহীন বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং বহু নির্যাতন সহ্য করেছেন। তার অদম্য নেতৃত্বগুণে আমরা পেয়েছি 'সোনার স্বপ্নের বাংলাদেশ'। তিনি বাঙালিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেন, বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি; তার এই গুণাবলি বর্তমান প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উজ্জাবিত করেছে। তার মধ্য ছিল দূরদর্শিতা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, ন্যায়পরায়ণতা, মানবতার প্রতীক, সাহসী যোদ্ধা। এসব গুণাবলি বর্তমান প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্য না থাকলে সে কখনো নেতা হতে পারে না, আগামী প্রজন্মেরও সে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তার জীবনটা রাজনৈতিকভাবে কেটেছে এবং তিনি এ দেশের মানুষের জন্য কেঁদেছেন। শেখ মুজিব ছিলেন জননেতার অন্যতম প্রতীক মানবতাবাদী। বঙ্গবন্ধু তেমনি সফল জননেতা হিসেবে মানবতাবাদের প্রতীক ছিলেন। তিনি যেখানে অন্যায়, অবিচার, শোষণ দেখেছেন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ঘোষণা করেছেন; এ জন্য তাকে বারবার শাসকগোষ্ঠীর কড়া শাসনে পড়তে হয়েছে, রাজনৈতিক জীবনে অর্ধেক সময় তাকে জেল খাটতে হয়েছে। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দীর্ঘ নয় মাস ছিলেন পাকিস্তান কারাগারে বন্দি, তবুও তিনি ছিলেন অনড় ও দৃঢ়। তার রাজনৈতিক জীবন ও গুণাবলি বিশ্বের মানুষকে জাগ্রত করেছে। এমনকি বিশ্বের অন্যতম কিউবার বিপস্নবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- 'আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি' তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সফল নেতা। তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে সক্ষম করে, এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াও তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভু্যত্থানের আন্দোলন, ১৯৭০ সালে নির্বাচন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ- প্রতিটি আন্দোলন মহান বীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার এই আন্দোলন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য করেন নি বরং দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য করেছেন। শেখ মুজিব বলেন- ''আমি সব ত্যাগ করতে পারি, তোমাদের ভালোবাসা আমি ত্যাগ করতে পারি না।' ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগামের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় অর্জিত হয়, এ জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে নিরপরাধ ব্যক্তি, অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতা সদ্য স্বাধীন দেশে শোষণ ও অন্ধকারাচ্ছন্নতা দেশ থেকে একটি আলোকিত সোনার স্বপ্নের বাংলাদেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটানো, সেই স্বপ্নের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে একটি শোষণহীন সমাজভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল; সুমধুর কণ্ঠে বলতে পারি- বঙ্গবন্ধুর দেশ মানেই বাংলাদেশ, হাজার শহীদের রক্তদানের দেশ মানেই বাংলাদেশ, রক্তিম সূর্যোদয়ের দেশ মানেই বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিটি নাগরিকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো আদর্শিক রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলা সবার প্রতি রইল আমার আহ্বান। কারণ বঙ্গবন্ধু ছিল একজন স্বদেশপ্রেমিক ব্যক্তি। কেননা স্বদেশপ্রেম মানবচরিত্রের এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ যেমন দেশপ্রেমিক পরিচয় বহন করে, তেমনি সাহিত্য, শিল্পকলা বা অন্যান্য জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে কাজ করাও দেশপ্রেমের লক্ষণ। তাই প্রত্যেকের কাজ হবে যার যার ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন করা যাতে স্বদেশের সবরকম উন্নতি সাধিত হয়। দেশপ্রেম নিজের দেশকে জানতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়। তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু দেশকে দায়িত্ব, কর্তব্য ও উন্নত শিখরে পৌঁছানোর লক্ষ্য ছিল তার অদম্য শক্তি। তার মধ্য ছিল এক বিশ্বপ্রেমের কান্ডারি। ---' স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম, যে নিজের দেশকে ভালোবাসে, সে বিশ্বপ্রেম মানবপ্রেমিক মানবতাবাদী'। এ ছাড়া স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমের একটি অংশবিশেষ, তাই প্রকৃতি স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্য কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। বরং স্বদেশপ্রীতির ভেতর দিয়ে বিশ্বপ্রীতির এক মহৎ উপলব্ধি, জাগরণ। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিল এসব গুণাবলি। এ জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী; বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান কারাগার থেকে ঢাকা আসলেন তখন তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে, কারও প্রতি বৈরী আচরণ সমর্থন করবে না'। এ জন্য তো ঘোষণা দিয়েছিলেন- 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রম্নতা নয়'। দেশের প্রতি দেশপ্রেমিকের ভাবছিল বলে তিনি এই কথার ঘোষণা দেন; কারণ দেশপ্রেমের মূল লক্ষ্য মানুষকে ভালোবাসা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক হয়ে যুদ্ধ করেছে তারা কখনো ভবিষ্যৎ সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশপ্রেমিকে ভাবগড়ে তুলতে হবে। তাহলে স্বাধীন জাতির মর্যাদা নিয়ে হাজার বছর আনন্দের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারব। কারণ বঙ্গবন্ধু সোনার মানুষ হিসেবে আমাদের সবার কাছে পরিচিত ছিল, বর্তমানে আছে, ভবিষ্যতে থাকবে। এ ছাড়া তিনি জাতীয় নেতা হিসেবে রূপদান করে জাতির পিতা হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন। বাঙালির প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা, বাংলাদেশ নিয়েছিল তার বুকভরা আশা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া এবং আজীবন হয়ে থাকবে সোনার বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত যেখানে থাকবে না অর্ধহারে ও অনাহারে মানুষ তারই সে স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এ ছাড়া শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্রণী ভূমিকা ছিল ব্যাপকহারে। তার স্বপ্ন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্নতার যুগ থেকে একটি শিক্ষার আলোর আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হোক এটাই জাতির কামনা, কারণ তিনি দিশাহারা বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিতে পারায়। এ জন্য তো তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের আলোকিত কারিগর।