ভর্তি পরীক্ষার ফর্মের মূল্য শিক্ষার্থীদের কতটা নাগালে

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মিতা কলমদার লোকপ্রশাসন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সারা দেশের পাবলিক, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নামক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলোতে। কিন্তু একটা বিষয় এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়; এবছর বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্মের মূল্য বেশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীই এখন কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতে শিখছে; হোক সেটা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে। বাংলাদেশে এখন সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রত্যেকটিতেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে প্রদান করা হয় ভর্তির সুযোগ। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায় তাদের ভর্তি পরীক্ষার নিয়মাবলি মেনে প্রতিটি শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন দুটি থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারে। উলেস্নখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিট মোট ১০টি এবং তন্মধ্যে ৫টাতে ভর্তির আবেদন ফি ৬০০ টাকা, বাকি ৫টাতে ৪০০ টাকা। এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিট ৩টি এবং প্রতিটির আবেদন ফি প্রায় ২০০০ টাকা। আবার ভর্তি পরীক্ষা এখন এমন একটা যুদ্ধে পরিণত হয়েছে যে একটা বা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে নিশ্চিত থাকা যায় না পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে কিনা! এ ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। আরও একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, অনলাইনে নিজে নিজে অ্যাপিস্নকেশন করার মতো ব্যবস্থা বা অবস্থা বেশির ভাগেরই থাকে না বা অনেকেরই হয়নি এখনো। সে জন্য স্থান বিশেষে প্রতি ইউনিটে আবেদন করার জন্য কম্পিউটার দোকানদারকে দিতে হবে সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ২০০ টাকা। তাই সবমিলিয়ে এখানে একটা ক্ষুদ্র হিসাব করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। একজন ভর্তিচ্ছু যদি ৪-৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১০-১২টি ইউনিটে পরীক্ষা দেয় তাহলে তার আবেদন ফি, অনলাইন দোকানের খরচ এবং যাতায়াত সবমিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে সহজ হিসাবেই বোঝা যাচ্ছে একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যদি সর্বোচ্চ ৫টা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিতে আগ্রহী থাকে, তার পরিবারের জন্য এত টাকা ম্যানেজ করা কতখানি কষ্টের হবে। আমাদের দেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। তাদের জন্য এটা কতটা কষ্টের তা অবর্ণনীয়? মধ্যবিত্তরাই যেখানে হিমশিম খেয়ে যায়, সেখানে নিম্নবিত্তের কত স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে; এটা যথাযথ বুঝে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত। পরিশেষে দাবি! দেশের ৩ থেকে ৪ লাখ ভর্তিচ্ছুর কথা মাথায় রেখে ভর্তি ফর্মের মূল্য কমানো হোক! স্বপ্নগুলো পিষে মারা না যাক আর্থিক অসামর্থ্য বা ভর্তি ফর্মের মূল্যবৃদ্ধির গেঁড়াকলে।