মিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায়ই অগ্নিকান্ডের খবর আসে। এসব অগ্নিকান্ড সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় বহুলাংশে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে আড়াই হাজার ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। চলন্তিকা মোড় থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকা পর্যন্ত ঝিলের ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল এই বস্তিটি। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের ১১৫ জন কর্মী কয়েক ঘণ্টার পরিশ্রমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। উলেস্নখ করা যেতে পারে, মিরপুরের অগ্নিকান্ড নিয়ে চলতি বছর পাঁচটি অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করতে হলো দেশবাসীকে। এসব অগ্নিকান্ডে শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আর সম্পদহানির বিষয়টিও উদ্বেগের। মিরপুরের সাম্প্রতিক এই অগ্নিকান্ডেও শত শত মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে, ২০ ফেব্রম্নয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায়, ২৮ ফেব্রম্নয়ারি রাতে মিরপুরের ভাষানটেকে জাহাঙ্গীর বস্তিতে এবং এর পরই আগুন লাগে বনানীর বহুতল ভবনে। এ ছাড়া ছোটখাটো কয়েকটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাজধানীবাসী এক প্রকার আগুন আতঙ্কে বাস করছেন বলা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ও ফায়ার ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত দশ বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৬ হাজারের মতো। এতে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় হাজারের মতো মানুষ, আহতের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। আর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকান্ডের মধ্যে ৭ হাজার ৮২৫টি অগ্নিকান্ডই ঘটেছে বৈদু্যতিক গোলযোগের কারণে। এ ছাড়া চুলার আগুন থেকে এবং সিগারেটের আগুন থেকেও আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। বলাই বাহুল্য, আগে শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকান্ডের খবর পাওয়া গেলেও বর্তমানে যে কোনো সময়ই ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অগ্নিকান্ডের কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে বিদু্যৎ ব্যবহার, পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার, দাহ্য ও রাসায়নিক পদার্থ যত্রতত্র রাখা ইত্যাদি। এ ছাড়া সচেতনতা এবং সতর্কতার অভাবকেও দায়ী করেছেন তারা। তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে তিনটি অগ্নিকান্ডে ১৬৪ জন, ২০১২ সালে ১১১ জন, ২০১৬ সালে ৪১ জনের প্রাণহানি ঘটে। আর ২০১৮ সালে অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩০ জন। এবং সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর চুড়িহাট্টায় প্রাণহানি ঘটেছে ৭০ জনের। আমরা মনে করি, অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির এ তথ্য শুধু উদ্বেগের নয়, মহাতঙ্কেরও। মিরপুরের সাম্প্রতিক অগ্নিকান্ড বৈদু্যতিক কারণে ঘটেছে বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের দাবি, অবৈধ গ্যাস ও বিদু্যতের সংযোগ ছিল বস্তিতে। বিদু্যৎ সংযোগ থেকে আগুন লেগে অরক্ষিত গ্যাসের সংযোগের সংস্পর্শে গিয়ে তা দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে। বস্তিতে গ্যাসের লাইনগুলো ছিল পস্নাস্টিকের, যা দ্রম্নত আগুন ছড়ায় বলেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। মিরপুর বস্তিতে অগ্নিকান্ডের কারণ উদঘাটনে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে ইতোমধ্যে। কমিটি ১৫ কার্যদিবসে তাদের প্রতিবেদন দিলেই জানা যাবে অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণ। বলার অপেক্ষা রাখে না, অগ্নিকান্ড একই সঙ্গে জীবন ও সম্পদবিনাশী। দেশে প্রায়ই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ, উদ্ধার প্রক্রিয়া ও জনসচেতনতা যতটুকু থাকা দরকার, তা নেই বললেই প্রতীয়মান হয়। এ অবস্থায় অগ্নিকান্ডসহ অন্যান্য দুর্যোগের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি নূ্যনতম পর্যায়ে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিরূপণে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার 'কনটিনজেন্সি পস্ন্যান' (আকস্মিক দুর্ঘটনা মোকাবিলায় পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা) তৈরি করা। বিশ্বের অনেক দেশে অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস ও বিদু্যৎ সংযোগ বন্ধ করার প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বাংলাদেশেরও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। এ ছাড়া অগ্নিকান্ডের বিপদ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত মহড়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা স্বেচ্ছাসেবক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে পারে।