সড়ক দুর্ঘটনা থামছেই না

সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে কবে!

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কিছুতেই থামছে না সড়কে মৃতু্যর মিছিল। প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। গণমাধ্যমে প্রকাশিত যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহায় যাতায়াতে সারাদেশে ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২২৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ৮৬৬ জন। অপরদিকে রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট ২৪৪ দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছেন। ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন ২০১৯ প্রকাশকালে এসব তথ্য তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি, আর দেশের দুর্ঘটনা এ তথ্য উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। প্রশ্ন হলো, সড়কে-মহাসড়কে মৃতু্যর এই বিভীষিকা কি চলতেই থাকবে? সোমবার যায়যায়দিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন পেশ করার দিন রোববার কুমিলস্নায় মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জন নিহত হন। বলাই বাহুল্য, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, সড়ক মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা, ঈদফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বা মনিটরিং শিথিলতা, মোটরসাইকেলে দূরপথে ঈদযাত্রা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যারা নিয়োজিত তারাও এ বিষয়টি অবগত। সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কেন? বিশ্লেষকরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, চালক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ, মহাসড়কে গতি নিরাপদ করা, ধীরগতি ও দ্রম্নতগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা, যানবাহনে যাত্রার আগে ত্রম্নটি পরীক্ষা, ঈদযাত্রা শুরুর মতো ফিরতি সময়েরও মনিটরিং চালু রাখা গেলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তা সহায়ক হতে পারে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংশ্লিষ্টরা প্রতিবেদন পেশকালে বলেছেন, প্রতিবছর ঈদের আগে মন্ত্রী-এমপি, বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের দৌড়-ঝাঁপ করতে দেখা গেলেও ঈদ শেষে ফেরার সময় তা আর দেখা যায় না। ফলে ফিরতি পথে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। আমাদের সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো, নৌপথেও বেশকিছু নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে, এরপরও সড়ক দুর্ঘটনা না কমা অত্যন্ত পরিতাপেরই জন্ম দেয়। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার এই দায়ভার কে নেবে, সঙ্গত কারণে এমন প্রশ্নও অযৌক্তিক হতে পারে না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, আহতদের অঙ্গহানি ও যানবাহনের ক্ষতি হলো সরাসরি প্রভাব। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত একেকটি মানুষের সঙ্গে জড়িত একেকটি পরিবারও এ ক্ষতির শিকার। সুতরাং বিপুল ও বহুমুখী এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা যে যৌক্তিক, তা নানানভাবেই আলোচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তিন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। ওভারস্পিড, ওভারটেকিং, যান্ত্রিক ও রাস্তার ত্রম্নটি। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস না পাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। চালকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ, গাড়ির অনুমোদন, সড়কের ত্রম্নটি, সঠিক তদারকির অভাবসহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে গলদ। দেশের এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়াও অমূলক নয়। সরকারের পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা রোধ না হওয়া অত্যন্ত পরিতাপের। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনা কেন রোধ হচ্ছে না তার সুস্পষ্ট কারণ নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। সম্প্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে চালক প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স ইসু্য পদ্ধতি আধুনিকায়ন, যানবাহনের ফিটনেস দেয়া পদ্ধতি আধুনিকায়ন, রাস্তায় ফুটপাথ-আন্ডারপাস-ওভারপাস নির্মাণ, ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ যেসব সুপারিশ করেছে তা আমলে নেয়া যেতে পারে। আমরা মনে করি, সড়ক-মহাসড়কের এই মৃতু্যর মিছিল যেভাবেই হোক থামাতে হবে।