খাতা মূল্যায়নে অবহেলা

কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে. সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করে ২ হাজার ৭৩৯ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে ফেল করা শতাধিক শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়ে চমক তৈরি করেছেন। আর শুধু তাই নয়, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩০৯ জন। ফেল থেকে পাস করেছেন ৬১৩ জন। প্রতি বছরের মতো এবারও এত বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তনের পেছনে পরীক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। জানা যাচ্ছে, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গত তিন বছর ধারাবাহিক গাফিলতির কারণে ১ হাজার পরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, খাতা মূল্যায়নে গাফিলতি করেছেন শিক্ষক- এই বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই সামনে আনে। কেননা এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না, একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বিকশিত হয় তার ফলাফলের ভিত্তিতে এবং শিক্ষাজীবন ও জীবনের প্রতিটা স্তরে পরীক্ষার ফল গুরুত্ব রাখে। ফলে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গাফিলতির বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের জন্ম দেয়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার, একাধিক বোর্ড সূত্রে এমনটিও জানা গেছে, খাতা মূল্যায়নে ধারাবাহিক গাফিলতি করেছেন এরকম ১ হাজার ২৬ জন পরীক্ষককে তারা চিহ্নিত করেছেন। বোর্ডের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, এর আগে বোর্ডগুলো অভিযুক্ত বেশির ভাগ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করে। এর ফলে ওই পরীক্ষক সারা জীবনের জন্য কোনো বোর্ডের পরীক্ষক হতে পারবেন না। আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেয়া সমীচীন যে, সৃষ্টি পরিস্থিতিতে পাবলিক পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকদের সময় বাড়ানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১০০ খাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। একই সঙ্গে খাতা পুনঃনিরীক্ষণে শুধু যোগফল দেখার পাশাপাশি ফের খাতা মূল্যায়নের দাবিও ছিল তাদের। যদিও এ দাবি নাকচ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। কেননা খাতা পুনঃনিরীক্ষণের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে গেলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। এতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। আমরা মনে করি সার্বিকভাবে যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। আমলে নেয়া দরকার- সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরীক্ষকদের উদাসীনতায় পাবলিক পরীক্ষায় অসংখ্য শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছেন না। এছাড়া প্রতি বছরই এ ঘটনা ঘটলেও দায়ী শিক্ষকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। দ্রম্নত সময়ে ফল প্রকাশ করতে গিয়ে পরীক্ষকদের দ্রম্নত সময়ে খাতা মূল্যায়ন করার একটা চাপ থাকে। ভুলগুলো এ চাপের কারণে বেশি হয় বলে মনে করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করতে হবে এবং যে উৎকণ্ঠাজনক বিষয় আলোচনায় এসেছে তা নিরসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অভিভাবকরা বলেছেন যে, পরীক্ষকের অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা ফল বিপর্যয়ের শিকার হওয়া নতুন নয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন পর্যন্ত করতে পারেননি। এ কারণে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।