পাঠক মত

সাম্প্রতিক বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

নুসরাত জাহান শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা দেশের নামকরা পত্র-পত্রিকাগুলো পড়ি, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ি অথবা বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলগুলো দেখি দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিষয়াবলির খবরাখবর জানার জন্য। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের যে কোনো মানুষ হয়তো সপ্তাহের কোনো একদিনের সকালের খবরের কাগজটি না খুলেও বলে দিতে পারবে যে গতদিন আমাদের দেশে ঠিক কি কি ঘটে গেছে। কারণ পত্রিকার পাতায় পাতায় আমরা নিয়মিত খুঁজে পাই কিছু বিষয় যার মধ্যে উলেস্নখযোগ্যভাবে রয়েছে- ধর্ষণ ও হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট নিরসন, রোহিঙ্গা সমস্যা, বাজেট উন্নয়ন, রাজনৈতিক দাঙ্গা ও শিক্ষক রাজনীতি, পদ্মা সেতু নির্মাণে অগ্রগতি এবং কোনো একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক লোকের বাংলাদেশে আগমন ও তাদের প্রতি অভ্যর্থনা। আমাদের দেশের সাম্প্রতিকতা যেন এই বিষয়গুলোর ভেতর থেকে আর বের হতে পারছে না। দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে যাওয়া এ দেশ আগামী একশ বছরেও এর পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে কিনা তা সন্দেহের অপেক্ষা রাখে না। ফলে হয়তো কোনো একদিন দেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে ঠিকই; কিন্তু নৈতিকতা আর মানবতাবোধের অবক্ষয় ঘটবে অচিরেই। আসলে এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও নিজেদের দেশকে নিয়ে আমাদের এতটা বেখেয়ালিপনা, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর। আমাদের দেশের নামিদামি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষিত তরুণসমাজ অপেক্ষা ক্ষিপ্রগতিতে তৈরি হচ্ছে শিক্ষিত মূর্খ অসচেতন তরুণসমাজ। আর অন্যদিকে শিক্ষকরা যেন তাদের রাজনীতির উচ্চতর দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কেও গড়ে তুলছে রাজনৈতিক খেলার মাঠ হিসেবে। এরপর রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। আসলে যে দেশে নাগরিক সমাজ সচেতন নয়, সে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে এবং ঘটতেই থাকবে। এর কোনো প্রতিকার সরকার থেকে দেয়া সম্ভব নয়। আমি দেখেছি, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সামনের হাইওয়ের স্পিডবেকার ও ডিভাইডার গত তিন-চার বছরে একাধিকবার ভাঙচুর করে নষ্ট করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দাঙ্গা, আন্দোলনে স্বয়ং ছাত্রছাত্রীরাই এগুলো করছে। সরকার থেকেও একাধিকবার পুনর্র্নির্মাণ করা হয়েছে এবং পরে আবার একইভাবে একই কাজ সংঘটিত হয়েছে। তারপর যখন কোনো ছাত্রছাত্রী বা অন্য কেউ এই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে তখন শুরু হয় সরকারকে দোষারোপ করা। অশিক্ষিত জাতিই কেবল দোষারোপের ভয়ঙ্কর পরিচয় দিতে জানে। শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষিত নাগরিক হয়ে যখন আমরা অশিক্ষার পরিচয় দিচ্ছি তখন স্বল্পবিদ্যায় শিক্ষিত সামান্য বাসড্রাইভারদের কাছ থেকে আমরা আর কিইবা আশা করতে পারি! তারপর আসে অতিসাম্প্রতিক বিষয় বাজেট উন্নয়ন। প্রতিবছর আমরা নিয়মিতভাবে এই বাজেট উন্নয়ন সম্পর্কে শুনে আসছি। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে বাজেট উন্নয়ন যেন দেশের জাতীয় সংগীতের রূপ নেয়। সবার মুখেই প্রায় একই কথা- শিক্ষা খাতে বাজেট উন্নয়ন; স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বাজেট উন্নয়ন ইত্যাদি। অথচ দেশের প্রতিটি খাতের জন্য যে পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ থাকে তা যদি সঠিকভাবে ব্যয় করা হতো তাহলে মনে হয় আর বাজেট উন্নয়নের প্রয়োজন দেখা যেত না। বাজেটের দৌড় আজ শুধু বাজেট উন্নয়নের বিভিন্ন স্স্নোগান পর্যন্তই। সর্বশেষ হলো ধর্ষণ ও হত্যা। ধর্ষণ সম্পর্কে সমাজে দুটি শ্রেণির মনোভাব ব্যক্ত করা যায়। একটি, যাদের কাছে ধর্ষণের সংবাদ দৈনিক খবরের কাগজের মতো প্রতিদিনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে ক্ষিপ্রগতিতে বেড়ে যাওয়া ধর্ষণের বিরুদ্ধে এদের কোনো ভ্রম্নক্ষেপ নেই। অন্যদিকে, যারা ধর্ষণের সম্মুখীন হয়ে আজ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং প্রতিটা ধর্ষণের সংবাদ তাদের যেন প্রতিনিয়ত নতুনভাবে মানসিক আঘাত দেয়। এই হলো আমাদের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ। সর্বোপরি বলা যায়, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে সাম্প্রতিকতার বেড়াজালে বন্দি আমরা অশিক্ষিত নাগরিক সমাজ।