নৃশংস গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর

রায় কার্যকরের উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জনের মৃতু্য হয়। এছাড়া আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। আর অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয়াবহ সেই ঘটনার ১৪ বছর ১ মাস ২০ দিন পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে দেশবাসীর অপেক্ষার অবসান ঘটলেও বাস্তবতা হলো, এখনো মামলার রায় কার্যকর করা যায়নি। দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনাল-১ নারকীয় ওই মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃতু্যদন্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। মামলার ৫২ আসামির মধ্যে অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ রাখা হয়। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছে বলেও জানা যায়। আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই ছিল গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনাকারীদের প্রধান টার্গেট। পৃথিবীতে এমন কলঙ্কজনক ঘটনার নজির খুব বেশি নেই বলেই আমাদের ধারণা। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে এসংক্রান্ত মামলা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে নানানভাবে। ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে অনেক তথ্য। জজ মিয়া নামের এক নিরীহ ব্যক্তিকে আটক করে তার কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করে ঘটনার প্রকৃত কুশীলবদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় দফার তদন্তে বেরিয়ে আসে হামলার নীলনকশা। ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আড়ালে প্রকৃত সত্য কী ছিল, দেশবাসীর সামনে এটা যেমন উদ্ঘাটন জরুরি ছিল, তেমনিভাবে জরুরি হলো আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন। দেরিতে হলেও সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এ হামলার পরিকল্পনাকারী কারা ছিল; কারা অংশ নিয়েছিল হামলায়। এটা ঠিক যে রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি রয়েছে। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল এবং আপিল নিষ্পত্তির মধ্যদিয়ে এ মামলা চূড়ান্ত পরিণতি পাবে এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত যেসব আসামির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, দায় তাদেরই, সমগ্র রাজনৈতিক দলের নয়- সবার মধ্যে এ উপলব্ধিও থাকা উচিত। দলের বিশেষ ব্যক্তি বা গ্রম্নপের সংশ্লিষ্টতা মানে সমগ্র দলের সংশ্লিষ্টতা নয়- এ উপলব্ধি থেকে দলীয় হাইকমান্ডেরও উচিত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। আর ভয়াবহ এ ঘটনা থেকে রাজনৈতিক নেতাদেরও শিক্ষা নিয়ে সজাগ হতে হবে। আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত সত্য যে, ২১ আগস্টের হামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি যোগাযোগ এবং সরকারের উদাসীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে সহযোগিতা বা পৃষ্ঠপোষকতায় একটি উগ্রপন্থি গোপন সংগঠন কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সেটারও একটা বড় উদাহরণ হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি-বি)। জঙ্গিবাদবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভ্রান্ত হলেও প্রত্যেক জঙ্গিগোষ্ঠীর একটা মতাদর্শ থাকে। কিন্তু হুজি-বি সেখান থেকে দূরে সরে একপর্যায়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার ক্রীড়নকে পরিণত হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনাও সেই সূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করা হয়। অন্যদিকে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই যে, রাজনীতি কতটা দুর্বৃত্তায়িত হলে এমনটি ঘটা সম্ভব। এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও খুবই জরুরি ছিল। যেহেতু ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য প্রমাণিত, বিচারের রায়ও রয়েছে। ফলে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় বাস্তবায়ন করা হবে- এমন প্রত্যাশা অযৌক্তিক হতে পারে না। আমরা মনে করি, রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে আদালতের নিয়মনীতি মেনেই তা করতে হবে।