ধর্ষণ নিয়ে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ

আমলে নিতে হবে

প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দ্রম্নততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ বিশেষত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণপরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রম্নততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার দায় মূলত রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। আমরা মনে করি, আদালতের পর্যবেক্ষণ যথাযথ এবং এই পর্যবেক্ষণকে দ্রম্নত আমলে নিতে হবে। কারণ অপরাধীর যদি শাস্তি নিশ্চিত করা না যায় তবে আরেক অপরাধের জন্ম দেবে। বর্তমান অপরাধকেন্দ্রিক সমাজবাস্তবতাও তাই। এটা সত্য সমাজে ধর্ষণ-গণধর্ষণ বেড়েই চলেছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণপরবর্তী হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এর থেকে স্কুল-কলেজ ছাত্রীরা যেমন রেহাই পাচ্ছে না, একইভাবে রেহাই পাচ্ছে না গৃহবধূরাও। এমন কি আমাদের কোমলমতি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষণ-গণধর্ষণ করছে পুলিশ, শিক্ষক ও ইমামও। এ ক্ষেত্রে বখাটেদের কথা বলাই বাহুল্য। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি পরিত্যক্ত বগির বাথরুম থেকে উদ্ধার মাদ্রাসা ছাত্রীর লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়। অপরদিকে মাদারীপুরে ট্রলার থেকে তুলে নিয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই বখাটের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ভোরে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দুজনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার রাত ১১টায় দিকে সদর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। এই ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ ও পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। যা বর্তমান সমাজে অত্যন্ত প্রকট। সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলী ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খল অপরাধপ্রবণ অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। এমন সমাজে ধর্ষণ-গণধর্ষণ এবং ধর্ষণপরবর্তী হত্যা, পুড়িয়ে ও প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা বন্ধ করা সহজ কাজ নয়। আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। রাষ্ট্রের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক; যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় এত চরমে পৌঁছেছে। নানা ছলে, প্রতারণায় এমনকি প্রকাশ্যে পরিবারের ভেতর ঢুকে পড়ছে দুর্বৃত্তরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা করছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র ভয়ঙ্করভাবে উদ্বেগজনক। মানুষ অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক হয়ে গেছে। ফলে মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে। অন্যায়টাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে। অন্যায়ের বিচার না হওয়ায়, সমাজে অন্যায় আরো বাড়ছে। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন যার কোনো বিকল্প নেই।