বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্যে পোলট্রি ফিড

দ্রম্নত কার্যকর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চারদিকে ভেজাল ও বিষাক্ত পণ্যের ছড়াছড়ি। বিশুদ্ধ খাবার এ যেন এক স্ব্বাপ্নিক ব্যাপার। যতই দিন যাচ্ছে মানুষ ভেজাল ও বিষাক্ত খাবার খেয়ে নানা ধরনের অনিরাময়যোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃতু্যর দিকে ধাবিত হচ্ছে।। কোনো জিনিস ভেজাল ও বিষাক্ত আর কোনো জিনিস বিশুদ্ধ বা খাঁটি এটাই মানুষ চিহ্নিত করতে পারছে না। খাবারদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, নদীদূষণ, পরিবেশদূষণ আমরা যেন সব ধরনের দূষণে আক্রান্ত। সব ধরনের দূষণই মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই দূষণের ফলে প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে মানবদেহে জন্ম নিচ্ছে নানা ধরনের জটিল রোগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দূষণের ফলে মানুষের শ্বাসযন্ত্র, হৃদরোগ, ক্যান্সার কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিস বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া নানারকম দূষণ মাতৃগর্ভে ভ্রূণের ক্ষতিসাধনসহ শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সাভার এলাকায় তিনটি পোলট্রি ফিড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৫ হাজার টন ট্যানারি বর্জ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাভারের ভার্কুতাতেই একলাখ টন, আমিনবাজারে দুই হাজার টন ও ভার্কুতা মোগড়াকান্দায় তিন হাজার টন বর্জ্য পাওয়া যায়। রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে ঘিরে এর আশপাশে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য বিষাক্ত পোলট্রি ফিড তৈরির কারখানা। সম্প্রতি, এসব ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে। হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে গড়ে ওঠা চামড়া শিল্পনগরীর একেবারে উত্তর প্রান্তঘেঁষে গড়ে উঠেছে বর্জ্য পোড়ানোর খামারগুলো। বর্জ্য পোড়াতে সেখানে প্রায় ৪০টির মতো চুলা রয়েছে। আর সেখানেই তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত পোলট্রি ফিড। অসাধু ব্যবসায়ীরা কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যেই ট্যানারির বর্জ্য জ্বালিয়ে বিষাক্ত পোলট্রি ফিড তৈরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারে সরবরাহ করছে। এসব ফিডে থাকছে ট্যানারির চামড়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক ক্রমিয়াম, সালফিউরিক অ্যাসিড, লাইম, সোডা, ফরমিকা, ক্লোরাইড, সালফেট, অ্যালুমিনিয়াম সালফেট প্রভৃতি। এসব বিষাক্ত উপাদান মুরগি ও মাছের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে মানব-শরীরেও। কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এই ঘটনার দ্বারা এটাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে মানুষই মানুষের অকাল মৃতু্যর জন্য দায়ী। এরা লোভী ও অসৎ, এরা অপরাধী। এরা মানুষের শত্রম্ন। এদের শুধু জরিমানা করলে হবে না। এদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে এধরনের বিষাক্ত ফিট উৎপাদন। এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত পোলট্রি ফিড। এ বাজারে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। পোলট্রি ফিডের প্রধান উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিন, এর ৭৫ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। বাকি অংশ আর্জেন্টিনা, ভারত ও ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়। এই খাবারে যদি বিষাক্ত জিনিস মেশানো হয় তা হলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া যায় তা হলে ভবিষ্যতে মানবদেহের জন্য বড় ধরনের বিপদ হিসেবে দেখা দেবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন এবং এর কোনো বিকল্প নেই।