চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীও ডেঙ্গু আক্রান্ত

জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী যেমন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তেমনইভাবে এই রোগে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। 'নীরব ঘাতক' ডেঙ্গু রোগীদের সেবায় নিয়োজিতরাও আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। শুক্রবার যায়যায়দিনে প্রকাশিত তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৯৪ জন চিকিৎসক এবং ৩০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এককভাবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ হাসপাতালের ২৫ জন চিকিৎসক এবং ৬২ জন কর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬ জন চিকিৎসক এবং ১২ জন নার্স রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া এ তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। চলতি মৌসুমে রাজধানীতে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে- এমন শঙ্কার কথা আগে জানানো হলেও সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে এমন তথ্যও বহুল আলোচিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরিপ করে জানিয়েছিল, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৮ ও দক্ষিণে ৭৮ শতাংশ এলাকায় এডিসের লার্ভা দেখা গেছে। এই সতর্কবার্তা আমলে না নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টরা যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটিও আলোচনায় এসেছে। আবার রাজধানীর মশা যে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, এ বিষয়ে প্রায় এক বছর আগে সিটি করপোরেশনকে সতর্ক করেছিল আইসিডিডিআরবি। এ বার্তা পাওয়ার পরও দুই সিটি করপোরেশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে বিদ্যমান বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ হাজার ৫৯২ জন রোগী। বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৭৬১ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৬ জন। আগের দিন ঢাকায় ৭১১ এবং ঢাকার বাইরে ৯১৫ জন। বলাই বাহুল্য, এবারের মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০০০ সালে দেশে প্রথমবার এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেখানে ৫০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন, সেখানে এ বছর শুধু আগস্ট মাসের ২২ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৪১ হাজার ১৩১ জন। তবে আগস্টের শেষ দিকে এসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ভর্তি রোগীর চেয়েও বেশি- এ তথ্য আশাবাদের। উলেস্নখ্য, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। এতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিষয়টিই সামনে আসে। আবার এটাও ঠিক যে, সতর্কবার্তা আমলে না নেয়া হলেও পরে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা তথা সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য বিদেশ থেকে কার্যকর মশার ওষুধ আমদানি করে তা প্রয়োজনের সময় স্প্রে করার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে সারা দেশের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযানও অব্যাহত রাখা দরকার। সর্বোপরি বলতে চাই, যেহেতু যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, সুতরাং এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এডিস মশার ঘনত্ব যাতে না বাড়ে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বছরের সব মৌসুমেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। শুধু সিটি করপোরেশনই নয়, সিটির বাইরে স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ কাজে তৎপর থাকা জরুরি। সরকার তথা দায়িত্বশীলরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।