বজ্রপাতে আবারও মৃতু্য

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বজ্রপাতে যেভাবে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে, তাতে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটি এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। যখন বজ্রপাতের কারণে মৃতু্যর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, তখন এই বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে। বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৩ জন, ফরিদপুরে নারীসহ ৩ জন, পটুয়াখালী ১ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন, মাগুরায় ১ জন, সিরাজগঞ্জে ১ জন ও জামালপুরে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে। আমরা বলতে চাই, যখন বজ্রপাতে প্রাণহানী ঘটেই চলেছে তখন এর ভয়াবহতা আমলে নেয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। বলা দরকার, বিভিন্ন ধরনের কাজে বাইরে থাকায় বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। এছাড়া এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল যে, ধানকাটার সময় ও বৃষ্টিতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। মাঠে গরু আনতে গিয়ে এবং টিন ও খড়ের ঘরে অবস্থান ও ঘুমানোর সময় বজ্রাঘাতে বেশি মানুষ মারা গেছেন। বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় অজ্ঞতাবশত লম্বা গাছের নিচে আশ্রয় নেয়ার সময় গাছে বজ্রপাত হওয়ায় মৃতু্যর ঘটনাও ঘটেছে। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, মে ও জুন মাসে বজ্রপাতে সারা দেশে ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে বলে জানা গিয়েছিল। এছাড়া তখন কিশোরগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বজ্রপাতে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এমন বিষয় সামনে আসে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের হার বেড়ে যাওয়া, যত্রতত্র মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানো এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বজ্রপাত বাড়ছে এমনটি আলোচনায় এসেছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার বজ্রপাতের ভয়াবহতাকে আমলে নেয়া এবং জনসাধারণের মধ্যে এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণা চালানো। মনে রাখতে হবে. যারা ঘরের বাইরে ক্ষেত-খামারে কাজ করেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যে স্থান যত উঁচু সে জায়গা মেঘের তত কাছাকাছি থাকায় সেখানে বজ্রপাতের আশঙ্কা তত বেশি থাকে, এছাড়া মৌসুমে ঘনকালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় থাকলে যদি বজ্রপাত হওয়ার অবস্থা তৈরি হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে থাকতে হবে। সার্বিকভাবে সর্বসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। যেভাবে বজ্রপাতের ভয়াবহতা বাড়ছে তাতে করে দ্রম্নত এই বিষয়ে উদ্যোগী না হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকবে, যা কাম্য নয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। এর অংশ হিসেবে তালগাছের চারা রোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। মনে রাখা দরকার, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই- কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত বজ্রপাতের ভয়াবহতাকে সামনে রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।