রোহিঙ্গা সংকট

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় দেশ হলেও, নানান সমস্যা যেন দেশটির পিছু ছাড়ছে না। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, সারাবিশ্বে আলোচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিলেও সেই রোহিঙ্গাদের কারণেই সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইসু্যতে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের ক্ষমতাধর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দিলেও অচিরেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে, শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠাতে। আর এ অনুরোধই বাংলাদেশকে চাপের মুখে ফেলেছে। বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইসু্যতে জাতিসংঘ কিংবা প্রভাবশালী ওই দেশগুলো দীর্ঘদিনেও মিয়ানমারের ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে এ কার্যক্রম আরও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুলে যাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করবে বলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন। রোববার যায়যায়দিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য থেকে স্পষ্ট, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার ও মিয়ানমারে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কৌশলে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এ ব্যাপারে নানামুখী ইন্ধনও জোগানো হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইন্ধনদাতা এনজিওদের তালিকা তৈরি করে তাদের নজরদারির আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। শরণার্থী রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথাও জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে সংকট আরও বাড়তে পারে। যত দিন যাচ্ছে, ততই বিষয়টি আরও জটিলতর হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ এখনো পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন রয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সাবেক এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, 'রোহিঙ্গাদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না। যেটা করতে হবে যে, মিয়ানমারের ওপর শক্ত অবস্থান নিতে হবে।' বলাই বাহুল্য- বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দেখা গেছে, মিয়ানমার এ ব্যাপারে যা বলেছে বাংলাদেশ সেভাবেই মেনে নিয়েছে। এরপরও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে গেলেই নানান সমস্যা সামনে এসেছে। অবশেষে রোহিঙ্গারাও সে দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এসব কর্মকান্ডের মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হতে পারে, বাংলাদেশের কৌশলে কোথাও ঘাটতি রয়েছে। আমরা মনে করি, এই ঘাটতি শনাক্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। কৌশলগত পরিবর্তন এনে মিয়ানমারের ওপরই চাপ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কূটনৈতিকভাবেই এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে, এমনই মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদনে বলেছিল, 'বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বড় ধরনের নিরাপত্তার সংকট তৈরি করতে পারে।' গণমাধ্যমের নানান খবরে বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে যে, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ অপরাধমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতায়ও যুক্ত হয়ে পড়ছে। ইসলামিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো, মিয়ানমারের ঘটনাকে মুসলমান নিধন হিসেবে জাহির করে আন্তঃসীমানা আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে, আইসিজি বিশ্লেষকরা এমন বার্তাও দিয়েছিল। বলাই বাহুল্য, পরিস্থিতি যেন ধীরে ধীরে সেদিকেই গড়াচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এটিকে বাড়িয়ে বলা হচ্ছে দাবি করলেও বিদ্যমান পরিস্থিতি যে একটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বোপরি বলতে চাই, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়া মানেই আরও দীর্ঘমেয়াদে ঝুলে যাওয়া। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইসু্যতে পরিস্থিতি ঘোলা করতে কোনো গোষ্ঠী যাতে অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র চালাতে না পারে তার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং কৌশলগত পরিবর্তন এনে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর ভরসা করা কতটা সঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করুক যাকে রোহিঙ্গা সংকট থেকে বাংলাদেশ চিরতরে মুক্তি পায়।