স্বজনদের আহাজারি

গুম হওয়া মানুষের সন্ধান করা জরুরি

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হলো রাজধানী ঢাকায়। ৩০ আগস্ট শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ উপলক্ষে আয়োজিত 'মায়ের ডাক' আলোচনা সভায় গুম হওয়া সন্তান-সদস্যদের ফিরে পেতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের মা এবং স্বজনরা। ২০১৩ সালে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসীর সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ছোট ছোট শিশুরাও তাদের বাবার ছবি হাতে নিয়ে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন নিখোঁজ বাবাকে ফেরত দিতে। অনুষ্ঠানে দেশে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান করতে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়ারও দাবি জানান মানবাধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিহাসের চরমতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হিসেবে বিশিষ্টজনরা চিহ্নিত করেছেন 'গুম' হওয়ার ঘটনাকে। তথ্য অনুযায়ী, কয়েক বছর আগে দেশে হঠাৎ করেই গুমের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের এই গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশে বিরোধী শক্তি গুম হচ্ছে উলেস্নখ করে গুম হওয়ার ব্যাপারে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কড়া সমালোচনা করা হয়। বলাই বাহুল্য, গুমের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গুমের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকাও অযৌক্তিক নয়। দেশে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ গুমের ঘটনায় সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। বাস্তবতা হলো তারাও গুম রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়েছে।র্ যাব-পুলিশের পরিচয়ে ধরে নেয়ার পর অপহরণকারীরা ধরা পড়েছে, এমন নজির নেই বললেই চলে। ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আড়ালেই থেকে গেছে, আর নেপথ্যের হোতাদেরও পরিচয় মেলেনি। হতভাগ্য স্বজনরা এখনো জানেন না- কবে শেষ হবে তাদের স্বজন ফেরার অপেক্ষার প্রহর। উলেস্নখ করা যেতে পারে, সব শ্রেণি-পেশার মানুষই অপহৃত হয়েছেন। নিখোঁজ এসব ব্যক্তির নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুম হওয়া মানুষের তালিকায় ঠাঁই পেলেও এসব ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত আজও সম্ভব হয়নি। ঘটনার অনুসন্ধানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার এই কারণে যে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এর বিকল্প নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের দশ বছরের শাসনামলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাসহ সারা দেশে ১ হাজার ২০৯ জন মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এ তথ্য নিয়ে হয়তো বিভ্রাট থাকতে পারে কিন্তু দেশ থেকে শত শত মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা মিথ্যে নয়। আর এত মানুষের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কে-ই বা তাদের অপহরণ করেছে সেসব উদঘাটিত হওয়া অপরিহার্য। দেশে সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও মানুষের নিখোঁজ হয়ে শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়। অপহরণ, গুম কিংবা নিখোঁজ হওয়ার মতো মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে নিঃসন্দেহে। ঘটনা যারাই ঘটাক না কেন, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। সঙ্গত কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্য হওয়া দরকার নিখোঁজদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। এটা করতে না পারলে আইন এবং আইনের শাসনের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। তা না পারলে সরকারের প্রতিও দেশের মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। ফলে 'মায়ের ডাক' অনুষ্ঠান থেকে এই অপরাধ বন্ধে এবং স্বজনদের খোঁজে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের যে দাবি উঠেছে তা আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সমীচীন বলেই আমরা মনে করি। এতে স্বজন হারানো মানুষ কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিও রোধ হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, গুম করা অপরাধ যা, হত্যা বা খুনের চেয়েও নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ। কেননা গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবার সারাজীবনই অবর্ণনীয় কষ্ট নিয়ে চলেন। সুতরাং প্রত্যাশা থাকবে, গুম হওয়া স্বজনদের এই হৃদয় বিগলিত কান্না সরকারকে স্পর্শ করুক। গুমের বিচার এবং নিখোঁজদের সন্ধানে সরকার তথা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করুক।