সাত কলেজ সংকট

প্রধানমন্ত্রীর সমীপে খোলা চিঠি

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শফিউল আল শামীম শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা কলেজ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা কন্যা শেখ হাসিনা। আশা করি মহান আলস্নাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। দোয়া করি যাতে সবসময় ভালো থাকেন। সম্ভাবনার বাংলাদেশকে উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে আপনার মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন আজ প্রতিটি বাঙালির। কিন্তু আমি ভালো নেই। কারণ আমি রাজধানীর সাত কলেজের মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থী। যার কারণে আমি আজ ধুঁকে ধুঁকে মরছি। শুধু আমি একা নই, আমার সঙ্গে আমার আরও প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভাই-বোনের জীবন আজ বিপন্ন। কেননা, ২০১৬ সালের ফেব্রম্নয়ারির যেদিন থেকে আমরা সরকারি সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি হয়েছিলাম সেদিন থেকেই আমাদের হাঁটু ভেঙে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ভঙ্গুর মেরুদন্ডকে ঢাবি নামক প্রভাবকের সাহায্যে পূর্ণগঠন করে সোজা হয়ে হাঁটার জন্য প্রস্তুত করে দেয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার বদৌলতে প্রথমেই আমাদের জীবন থেকে গ্রাস করে ফেলা হয়েছে জীবন্ত একটি বছর। এর পরের ধাক্কাটি আমরা খেলাম পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্রে। কোনো সিলেবাস প্রণয়ন না করেই শুরু হলো আমাদের অগ্নিপরীক্ষা। ফলে সিলেবাসের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের মিল না থাকায় ফলাফল বিপর্যয় দেখা দিতে লাগল ডিপার্টমেন্টগুলোতে। অতঃপর ফলাফল প্রকাশের পালা আসার কথা ছিল যথাসময়ে। কিন্তু তাও আমাদের ভাগ্যে জুটলো না। অর্ধ বছরেও প্রকাশ হলো না ফলাফল। অপেক্ষার বাঁধ যখন ভেঙে গেল শিক্ষার্থীরা নেমে পড়ল রাস্তায়, একের পর এক আন্দোলন অবরোধে চলল কিছুদিন। এরপর থেকেই আমরা আশ্বাস পেয়ে আসছি, কিন্তু সমাধান আজও নজরে পড়েনি। মাননীয় দেশরত্ন, উন্নতির বদলে আমরা কি পেয়েছি ঢাবি থেকে? শুধু ঢাবির সিলমোহরযুক্ত খাতায় পরীক্ষা দিচ্ছি এটুকুই আমাদের প্রাপ্তি। আমাদের কলেজগুলো আজও আগের মতোই চলছে যেমনটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলেছিল। ব্যবহারিক ক্লাস তো দূরের কথা, সর্বশেষ তাত্ত্বিক ক্লাস কবে হয়েছে তা কোনো ছাত্র কিংবা শিক্ষক বলতে পারবে না বলে আমার বিশ্বাস। ক্লাস নেই, পরীক্ষা নেই, কোনো প্রকার তদারকি নেই ঢাবি থেকে। কিন্তু পরীক্ষার খাতায় ঠিকই গণহারে ফেল আসছে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জিজ্ঞাসা ঢাবি কি শুধু খাতা দেখার দায়িত্বই নিয়েছিল সাত কলেজের নাকি তাদের সার্বিক উন্নয়নের? আমরা এখন হয়ে গেলাম ঢাবির গলার কাঁটা। না পারছে গিলতে, না পারছে উগলে দিতে। যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটমুক্ত হয়ে রকেট গতিতে এগোচ্ছে আমরা সেখানে জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছি বছরের পর বছর। ফলে আমাদের মেধা মানসিকতা নষ্ট হচ্ছে দিন দিন। ক্লাসপরীক্ষা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে। মাননীয় নেত্রী, আমাদের মুখের দিকে পরিবারগুলো চেয়ে বসে আছে যে পড়াশোনা শেষ করে একদিন পরিবারের হাল ধরব। কিন্তু ক্লাস পরীক্ষা না থাকলেও আমাদের ঢাকায় পড়ে থাকতে হচ্ছে বছরের পর বছর। বৃদ্ধ বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে তাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে অস্তিত্বের সংকটে আজ আমরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সাত কলেজ আজ একটি অভিশাপের নাম। সাত কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিশপ্ত জীবন। জানেন, মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা জাগে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি সোনার বাংলায় আমাদেরও একদিন সুদিন আসবে। কিন্তু সেই সুদিনটি আদৌ আসবে আমাদের জীবনে জননেত্রী? আমাদের বয়স বাড়তেছে দিন দিন। ত্রিশ বছর পার হয়ে গেলে আমাদের এই সার্টিফিকেটের মূল্য চার আনাও নেই চাকরির বাজারে। আমাদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো শিথিলতাও থাকবে না এটা নিশ্চিত। পরিচয় সংকটে আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন জরাকীর্ণ। ঢাবির শিক্ষার্থী বললে উপহাস শুনতে হয়, সাত কলেজ বললে হাসির পাত্র হই। আমাদের জন্য ঢাবির নিয়মিত শিক্ষার্থীরাও বিপাকে আছেন। তাদেরও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করতে হচ্ছে। সাত কলেজ সংকট যেহেতু এত তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং এর সঙ্গে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে রয়েছে তাই আমি মনে করি এ বিষয়টিকে দোলাচলে রেখে দেয়া মোটেই কাম্য নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। যাতে শিক্ষার্থীদের আর একটি দিনও নষ্ট না হয় এবং সহসা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়। এ ব্যাপারে আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অন্যথায় ব্যর্থতা ও পরিপার্শ্বের বোঝা বইতে না পেরে বদরুন্নেসা কলেজের মিতুর মতো ঝরে যাবে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ।