অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ: শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাংলাদেশের সংকটাপন্ন বাম আন্দোলনের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নতুন করে গড়ে তুলেই অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদকে মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানোর সর্বোৎকৃষ্ট পথ। ভালো হতো সুস্থ থাকাকালে অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ নিজেই এই ঐক্য গড়ার কাজে উদ্যোগী হলে। হয়তো অভিমানবশত এবং শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে তিনি উদ্যোগী হননি।

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রণেশ মৈত্র
গত ২৩ আগস্ট রাত ৯টার দিকে চোখ পড়ল চরম দুঃসংবাদটি। বাংলাদেশের তথা উপমহাদেশের বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত, ১৯৭১-এর মুজিবনগর সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৬৭ সাল থেকে (রুশপন্থি বলে তখন পরিচিত) ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ পরলোক গমন করেছেন। খবরটি শোকাবহ এবং বাংলাদেশের সব বামপন্থি শক্তির জন্যই বেদনাদায়ক। অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ যদিও অকালে মৃতু্যবরণ করেননি- মারা গেছেন ৯৭ বছর বয়সে, তবুও তার পূর্ণতা আরও বহুদিন আমরা উপলব্ধি করব। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি যখন দেশের সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গনকে গ্রাস করেছে, যখন প্রায় সমগ্র রাজনীতিই হয়ে পড়েছে চরমভাবে স্বার্থান্ধ ও দুর্নীতি পরায়ণ তখন অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদের মতো নির্লোভ, সৎ, আদর্শনিষ্ট রাজনৈতিক নেতার দৈহিক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও সদর্প রাজনৈতিক বিচরণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন কুমিলস্না জেলা দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান ও অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ও ধীরে ধীরে দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ ১৯৫৪ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত যুবফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের সদৃশ্য নির্বাচিত হন তৎকালীন মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মফিজুল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশেও তিনি দলীয় প্রতীক কুঁড়েঘর নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্যপদে নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৬৫৪ সাল থেকেই রাজনীতির অঙ্গনে অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ প্রকাশ্য বিচরণ শুরু করেন। সেই যে শুরু তারপর থেকে তা চলেছে তীব্রবেগে, তীব্রগতিতে অবিরাম-যার সমাপ্তি হলো ২৩ আগস্ট সন্ধ্যারাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত দলীয় সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত থেকে। অবশ্য মৃতু্য পূর্ববর্তী অন্তত দুই দশক পর্যন্ত স্বীয় স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি ঢাকার বাইরে তেমন একটা দৌড়ঝাঁপ করতে পারেননি। শেষ তিন বছর তো গুরুতর অসুস্থ হয়ে বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে কাটাতেই বাধ্য হয়েছেন। দৌড়ঝাঁপের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা গড়ে ওঠে তার দলটির দফায় দফায় ভাঙনে। রাজনৈতিক বা আদর্শিক কোনো কারণে নয়, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিরোধই একের পর ওই ভাঙনগুলো দলটির সব ভগ্নাংশকেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকৃতিতে নামিয়ে আনে-পরিণতিতে বাংলাদেশের বামপন্থি আন্দোলন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। কর্মীরা যারা নানা জেলায়, নানা উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন ক্ষুব্ধচিত্তে তারা হয়ে পড়েন নিষ্ক্রিয় ও হতাশাগ্রস্ত। আজ তো ন্যাপের সিংহভাগ নেতাকর্মীই হয়ে পড়েছেন বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। পরিস্থিতি যেন দিনে দিনে সামলানোর অতীত রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের সংকটাপন্ন বাম আন্দোলনের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নতুন করে গড়ে তুলেই অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদকে মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানোর সর্বোৎকৃষ্ট পথ। ভালো হতো সুস্থ থাকাকালে অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ নিজেই এই ঐক্য গড়ার কাজে উদ্যোগী হলে। হয়তো অভিমানবশত এবং শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে তিনি উদ্যোগী হননি। অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ তো সবেমাত্র চলে গেলেন। তার বিশ্বস্ততম সহকর্মী সহযোদ্ধা ডা. এমএ ওয়াদুদ, চৌধুরী হারুনর রশিদ, পীর হাবিবুর রহমান, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, পটুয়াখালীর আশরাফ হোসেনসহ আরও অনেকে তো বহুদিন আগেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আর যারা উদ্যোগ নিতে পারতেন তাদের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ। কিন্তু তারা তো অনেক আগেই ভিন্ন স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। সুরঞ্জিতও দুই বছর আগে চলে গেলেন। ঢাকা ও জেলাগুলোর দিকে তাকালে ন্যাপের প্রধান নেতাদের মধ্যে বেগম আমেনা আহমেদ, ১৯৭২ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া জননেতা পংকজ ভট্টাচার্য এই দুজনের মিলিত উদ্যোগই মাত্র পারে ন্যাপকে পুনরেকত্রিত করে একটি বৃহত্তর ও কার্যকর সংগঠনের রূপ দিতে। এখন ন্যাপ বা বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের দিকে ফিরে তাকানো যাক- সুদূর পঞ্চাশের দশকে। তখন পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও পূর্ববাংলায় আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার। কেন্দ্রে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর ও পূর্ব বাংলায় আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে। কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মাত্র ১২ জন এমপি ছিলেন। কিন্তু পাঞ্জাবি ভূস্বামীদের দল রিপাবলিকান পার্টির যোগসাজসে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রিত্বে অধিষ্ঠিত হন। তখন আওয়ামী লীগের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি ছিল সাম্রাজ্যবাদ, সিয়াটো, সেস্টো ও পাক-মার্কিন-সামরিক চুক্তির বিরোধিতা করে স্বাধীন নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা ও বিশ্বশান্তির প্রতিষ্ঠার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর গদিতে আসীন হয়েই সোহরাওয়ার্দী ওই সব চুক্তির প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন ঘোষণা করলেন যার ফলে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হচ্ছিল। আবার পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রের বিন্দুমাত্র সংশোধন না করেই প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঘোষণা করলেন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি ৯৮ ভাগ পূরণ হয়েছে। ফলে আওয়ামী অভ্যন্তরে গভীর মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে দলের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কাগমারীতে ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সির অধিবেশন আহ্বান করেন। ইতিহাসে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিল অধিবেশনে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। কাগমারীতে ওই কাউন্সিল অধিবেশনের প্রাক্কালে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিরা পূর্ববাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রী ও কমিটির সদস্যরা যোগ দেন। সভায় মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি ও পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে তুমুল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার ঘোষিত পররাষ্ট্র ও স্বায়ত্তশাসনবিষয়ক মতে অটল থাকেন। অন্যপক্ষে মাওলানা ভাসানীও দলের গৃহীত নীতির প্রশ্নে অনড় অবস্থান গ্রহণ করায় চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরদিন সকালে কাউন্সিল অধিবেশনেও বিষয় দুটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। আগের দিন রাতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় একটি সমঝোতা হয়েছিল যে বিতর্কিত বিষয় দুটি সম্পর্কে দলের বিগত কাউন্সিল অধিবেশনের গৃহীত প্রস্তাবগুলো পঠিত ও গৃহীত () বলে কাগমারী কাউন্সিলে প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্ক কাউন্সিল সভাতেও তীব্র হয়ে ওঠায় শেষ পর্যন্ত ওই দুটি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে দলীয় নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার দাবি সংবলিত একটি প্রস্তাব তুমুল ভোটাধিক্যে গৃহীত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সদলবলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তৎক্ষণাৎ ঢাকা চলে যান। অতঃপর কাউন্সিল সভা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়। ঢাকায় গিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাল্টা বিশেষ কাউন্সিল ডাকেন দলীয় সভাপতির সঙ্গে বিন্দুমাত্র আলোচনা না করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। দিন কয়েকের মধ্যেই অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল মতিন, সেলিনা বানুসহ বামপন্থি আওয়ামী লীগ নেতারাও দল থেকে পদত্যাগ করেন। মাওলানা ভাসানী তখন গোটা পাকিস্তানব্যাপী প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী নানা দল ও নেতার সঙ্গে আলোচনা করে ১৯৫৭ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই তারিখে ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিককর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। মাওলানা ভাসানী ও অপরাপর নেতারা আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করার পরপরই পাবনাতেও আমরা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করি। পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায় ঢাকাসহ পূর্ববাংলার সব জেলায়। যথারীতি আমরা বিপুল উৎসাহে দলে দলে ঢাকা রওনা হলাম। সমগ্র পূর্ববাংলার ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরও সোৎসাহে যোগ দিয়ে সম্মেলনের ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ আওয়ামী লীগ, কংগ্রেস, গণতন্ত্রী দলসহ পূর্ববাংলার প্রগতিশীল দলগুলোর সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদবিরোধী স্বায়ত্তশাসনকামী নেতাকর্মীরাও বিপুল উৎসবে ওই গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে যোগ দিলেন। অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ মাওলানা ভাসানীর দক্ষিণ হস্ত হিসেবে সম্মেলন সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আকাশ ও রেলপথে (ভারতের অভ্যন্তর দিয়ে) পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে বিভিন্ন প্রগতিশীল দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীও সম্মেলনে যোগ দিলেন সহস্র কণ্ঠে 'মালরেকি আউর মাগবেরী পাকিস্তা কী আওয়াম কি ইত্তেহাদ' স্স্নোগানে ঢাকার রাজপথগুলো প্রকম্পিত করে। ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত 'রূপমহল' সিনেমা হলে দুদিনব্যাপী নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ পূর্ববাংলায় ক্ষমতাসীন থেকে বেশকিছু জনকল্যাণমূলক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ করে প্রশংসিত হলেও, তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে নতুন একটি দলের সম্ভাব্য আত্মপ্রকাশকে সুনজরে দেখেননি বিশেষ করে দলটির উগ্রদক্ষিণপন্থি অংশ। তাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল (ইত্তেফাকের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জামাতা ও পরবর্তীতে জাসদ নেতা) সদরঘাটে বসে ওই সম্মেলনকে বা তাতে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের আক্রমণ করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সভাপতি করা কালে মাওলানা ভাসানীর কাছে একটি খবর এসে পৌঁছায় যে সম্মেলনে আসা ডেলিগেটরা আক্রান্ত হবেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ডেলিগেটদের বললেন, আজ দিবারাত্র এবং কাল দুপুরে সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাই হলের মধ্যেই অবস্থান করবেন। পানাহার ও টয়লেটের ব্যবস্থা হলেই করা হবে। বিমানে লাহোর থেকে আসছিলেন পাঞ্জাবের বিখ্যাত জননেতা মিয়া ইফতেখার উদ্দিন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিযোগে রূপমহল সিনেমা হলে আসার পথে তাকে আক্রমণ করে গাড়ির কাচ ভেঙে তাকে আহত রক্তাক্ত করা হয়। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফ্‌ফার খান, খান আব্দুল ওয়ালি খান, করাচি থেকে মাহমুদুল হক ওসমানী, বেলুচিস্তানের গাউস বখস, খায়ের বখস মারী প্রমুখসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী যোগ দেন। গঠিত হয় পাকিস্তান ন্যাপ ও পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী এবং কেন্দ্রে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ। ন্যাপ গঠিত হওয়ার পর পাকিস্তানব্যাপী দলটি বৃহত্তর অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যার বিস্তার ঘটে পাকিস্তানের সব অঞ্চলে। আর আওয়ামী লীগ তখন অসাম্প্রদায়িক দল হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু ন্যাপ গঠনের পাঁচ বছর পরে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের দুই নেতা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্য আদর্শিক দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। চীন আইয়ুবের পক্ষ নিল মাওলানা ভাসানীও সেদিকে ঝুঁকলেন। তখন ১৯৬৭ সালে রিকুইজিশন কাউন্সিল ডেকে নতুন ন্যাপ গঠন করা হয় অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদের নেতৃত্বে। সভাপতি হওয়ার পর তার রাজনীতি নতুন ঐতিহ্যমন্ডিত হয়। সমাজতন্ত্রকে তিনি আঁকড়ে ধরে থাকলেন আজীবন আজ তাকে জানাই শ্রদ্ধা-জানাই লাল সালাম। রণেশ মৈত্র: সাংবাদিক, একুশ পদকপ্রাপ্ত