আসামে নাগরিকত্ব থেকে বাদ ১৯ লাখ

সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোরতা জরুরি

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে নাগরিক সংকট বাড়ছে। শরণার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে দ্রম্নত। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা যখন সারা বিশ্বের প্রায় দশ কোটি রাষ্ট্রহীন মানুষের সংকটের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছে তখন ভারতের আসামে নতুন করে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ল প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ব্যাপক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের রাজ্য আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জিতে আসামে বসবাসরত ১৯ লাখের নাম নেই। আর নাগরিকত্ব বাদ পড়াদের একটি বড় অংশ মুসলমান বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা আশঙ্কা করছেন, বাঙালি অনেক হিন্দুর নামও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সার্বিকভাবে এ পরিস্থিতি বিশ্বে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যাকেই বাড়িয়ে তুলল, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, চূড়ান্ত তালিকায় আসামের নাগরিক হিসাবে ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে আর বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। তালিকায় নাম না থাকলেই বিদেশি বলে চিহ্নিত কিংবা বন্দিশিবিরে নেয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে আশ্বস্ত করেছে আসাম রাজ্য সরকার। পক্ষান্তরে, তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদের ফরেনার্স ট্রাইবু্যনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইবু্যনাল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে। ট্রাইবু্যনালে মামলায় হেরে গেলে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগও থাকছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাতিল করার লক্ষ্যেই নতুন করে এই নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আসামে প্রথম নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে আসামে বসবাস করছে দাবি তুলে কয়েক দশক আগে আসামে 'বাঙ্গালি খেদাও' আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে চার বছর আগে আসাম সরকার নতুন নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজ শুরু করে। নাগরিকপঞ্জিতে ঠাঁই পেতে বাসিন্দাদের প্রমাণ করতে হয়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেঁড়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এই নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া বাংলা ভাষাভাষি চিহ্নিত করে তাদের ভারত থেকে বের করে দেয়া হতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে আসামের বাদ পড়া নাগরিকদের মনে। আর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরেও স্বাভাবিকভাবে উদ্বেগ রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচারে নিজেদের জন্মভিটা থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক। বাংলাদেশ মানবিক কারণে এ দেশে তাদের আশ্রয় দিলেও, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যাপক সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিশ্রম্নতি এবং চুক্তি করলেও মিয়ানমার সরকার এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করেনি। এমনকি, সে দেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেনি। যে কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা সত্ত্বেও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও সমর্থন রয়েছে। এরপরও ভারত সরকার যখন আসামের ১৯ লাখেরও বেশি বাঙালিকে বাদ দিয়ে রাজ্যের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করেছে, তখন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা মনে করি, বাদ পড়া আসামের মানুষ যাতে সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা করা দরকার। সর্বোপরি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে আশ্বস্ত করেছেন, 'এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।' এরপরও আমরা মনে করি, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় যে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ, তদ্রূপ আরও কোনো সংকটের মুখোমুখি হতে দেয়া যাবে না দেশকে। আসাম সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় সে দেশের নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। প্রত্যাশা থাকবে, সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশের কোনো নাগরিক যেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সরকার তথা সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।