হ্যালো লিডার হ্যালো মিনিস্টার

মিল্কভিটার জমি বেহাত ও দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সময়ের দাবি

দুটো সংবাদই জনগণের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আজকের বাংলাদেশে জনগণ এ ধরনের সংবাদ দেখতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় দেশ যখন মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে উন্নীত হয়েছে তখন এ ধরনের কর্মকান্ড সে মর্যাদায় আঘাত হানে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাস্তবায়ন করে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ও জনগণ একাত্ম হয়ে কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করে জনগণের কাছে অনেক বেশি দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে মিল্ক ভিটার যে কর্মকর্তা বা নেতারা এ ধরনের জনবিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সময়ের দাবি। এদের শাস্তির আওতায় না আনলে এটি খারাপ নজির স্থাপন হবে।

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সোহেল হায়দার চৌধুরী
শিশুসহ দেশের জনগণের দুগ্ধ চাহিদা মেটাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মিল্ক ভিটা ব্র্যান্ডের সেই প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধুই ৫ হাজার একর জমি দিয়েছিলেন গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু পাবনা ও সিরাজগঞ্জে দেয়া সেই বরাদ্দকৃত জমির ৪ হাজার একরই বেহাত ও দখল হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা না থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গত ২০ আগস্ট বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিল্ক ভিটাকে পাঁচ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেন। বেহাত হতে হতে এখন মিল্ক ভিটার হাতে এক হাজার একরের মতো জমি আছে। তিনি বলেন, মিল্ক ভিটার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে অসাধু লোকজন জমি বরাদ্দ নিয়ে দখল করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। এসব জমি উদ্ধারে মিল্ক ভিটা কখনো আইনি লড়াইয়ে যায়নি। কমিটি এ জমি উদ্ধারে মিল্ক ভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এদিকে গত ১৪ মে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতির চক্র, মাথাভারী প্রশাসন ও গতিশীল নেতৃত্বের অভাবেই মিল্ক ভিটা গতি পাচ্ছে না। ওইদিন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) বিশেষ সাধারণ সভা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন-২০১৯ এর উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। দুটো সংবাদই জনগণের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আজকের বাংলাদেশে জনগণ এ ধরনের সংবাদ দেখতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় দেশ যখন মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে উন্নীত হয়েছে তখন এ ধরনের কর্মকান্ড সে মর্যাদায় আঘাত হানে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাস্তবায়ন করে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ও জনগণ একাত্ম হয়ে কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করে জনগণের কাছে অনেক বেশি দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে মিল্ক ভিটার যে কর্মকর্তা বা নেতারা এ ধরনের জনবিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সময়ের দাবি। এদের শাস্তির আওতায় না আনলে এটি খারাপ নজির স্থাপন হবে। লক্ষণীয় বিষয়- দুটি সংবাদের চিত্র একইরকম। অর্থাৎ দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রী কতটা লাচার হলে প্রকাশ্যে এসব কথা বলেন, সেটা অনুমেয়। যে সরকার ক্ষমতায় সেই সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এতটা ক্ষোভ প্রকাশ করার কথা নয়; কিন্তু পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে তাদেরও এছাড়া কিছু করার নেই। তবে সংসদীয় কমিটি ও প্রতিমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য ও তথ্য প্রকাশের জন্য জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এখন দেখার বিষয়- এ সঙ্কট সমাধানে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্বশীলরা কী ব্যবস্থা নেন? সংসদীয় কমিটি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীই বা দীর্ঘমেয়াদি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ সংবাদ দুটি প্রকাশিত হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুপ্রেমী অনেককেই মানসিকভাবে আহত হতে দেখেছি। শাসক দলের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ এবং সমর্থকদের অনেকেই এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের যুক্তি হলো, জাতির পিতার গড়া প্রতিষ্ঠানে তার আদর্শে বিশ্বাসী (?) নীতি-নির্ধারক বা কর্মকর্তারা থাকার পরেও এ ধরনের অভিযোগ কেন উঠবে? তারা প্রশ্ন তুলেছেন, গত প্রায় ১১ বছর আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায়। এ সময় বেহাত ও দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা নেননি কেন? অথবা ২ লাখ লিটার থেকে কমে মিল্ক ভিটার দুগ্ধ উৎপাদন ৯০ হাজার লিটারে কেন এলো? জমি দখল ও বেহাত এবং দুগ্ধ উৎপাদন কমে যাওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? বিষয়টি সাদা চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এর সঙ্গে বড় একটি চক্র জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র এখানে নানা অপকর্ম করতে করতে খুঁটি গেড়ে বসে আছে বলে শোনা যায়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সখ্যের বিষয়টিও কানাঘুষা রয়েছে। চক্রটি প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সরকার ও আওয়ামী লীগের লেবাস পরে এ ধরনের অপকর্ম করে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের কথা ভেবে যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুললেন, সে প্রতিষ্ঠান নিয়ে নয়-ছয় করার দুঃসাহস যারা দেখায় তাদের কোনোভাবে ক্ষমা করা যায় না। আর যদি তারা কোনোভাবে বা কোনো দোহাই দিয়ে ক্ষমা পেয়ে যায়, তবে জাতির কাছে ভুল বার্তা যাবে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে শিগগিরই এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত প্রস্তাবনাগুলো ভেবে দেখা যেতে পারে- ১. জমি বেহাত নিয়ে সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট ও প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মিল্ক ভিটা নিয়ে পূর্বাপর তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পারে সরকারের বরাবরে। ২. সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি ও প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে মনিটরিং ও পর্যালোচনা করে সর্বশেষ অবস্থা আবারও তুলে ধরতে পারেন জাতির কাছে। ৩. জমি বেহাত ও দখলের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি জনসমক্ষে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা যেতে পারে। ৪. এ ধরনের ঘটনার পরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে যে অপরাধ করেছেন তাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ৫. এ ঘটনার পরিপূর্ণ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। পাশাপাশি পত্রিকা ও মিডিয়ায় তাদের ছবিসহ অপরাধ উলেস্নখ করে সংবাদ সম্মেলন করা যেতে পারে। ৬. মিল্ক ভিটার সব কার্যালয় ও কারখানার সামনে অপরাধী তথা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারীদের ছবি ও অপরাধের কথা উলেস্নখপূর্বক শাস্তির বিষয়টি তুলে ধরা যেতে পারে। ৭. যাদের কারণে নানা উপায়ে মিল্ক ভিটা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা যেতে পারে। ৮. মিল্ক ভিটার ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিদের যোগসাজশ আছে কিনা সেটিরও তদন্ত করে দেখা দরকার। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জীবন বিপন্ন করে, পিতার মতো করে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এড়িয়ে সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে অহরাত্রি পরিশ্রম করছেন। দেশ-বিদেশের অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ধরনের অপকর্মকারীরা সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর যে ভাবমূর্তি সেটিকে বিনষ্ট করছে। তারা নিজেদের স্বার্থে সরকারকে ব্যবহার করছে, দায় গড়াচ্ছে সরকারের ওপর। এখনই সময় এ ধরনের ষড়যন্ত্রকারী ও দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, অপরাধী বা দুর্নীতিবাজ যেই হোন না কেন, তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ মিল্ক ভিটা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি ও প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। সোহেল হায়দার চৌধুরী: বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক যায়যায়দিন। সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন