জঙ্গিবাদে নতুন ঝুঁকি

সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে আবারও জঙ্গিবাদে ঝুঁকির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। গত পাঁচ মাসে রাজধানীতে ৫টি জঙ্গি ঘটনা এবং সন্দেহভাজনরা অধরা থাকায় বিষয়টি জোরেসোরেই আলোচিত হচ্ছে। আর এসব জঙ্গি ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রতীয়মান হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা কোণঠাসা হয়ে থাকলেও তারা যে নির্মূল হয়েছে তেমনটি নয়। জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তা নিশ্চিতভাবেই ফল দিয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই যে তারা সুযোগ পেলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না, তা জোর দিয়ে বলা কঠিন। ভিন্ন কৌশল ও রূপে তারা যে হাজির হয়, সেই নজির আমরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাই। ফলে আমাদের আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপেস্নাসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণ এবং এরপর ফার্মগেট ও পল্টনে ট্রাফিক পুলিশবক্সের পাশে আইইডি রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ চারটি ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনরা ধরা না পড়ায় মামলার তদন্তে যেমন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই, তেমনইভাবে পরবর্তীতে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনাও আশঙ্কাও অমূলক হতে পারে না। এমনই প্রেক্ষাপটে গত শনিবার রাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আইইডি বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। প্রাথমিক তদন্তের পর সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিটি ঘটনার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ৫টি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি ঘটনায়ই জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল পুলিশ। বলাই বাহুল্য, ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় জঙ্গিদের আস্তানা; ভেঙে দেয় তাদের নেটওয়ার্ক, নেতৃত্ব। আশার কথা যে, এরপর দুই বছরেরও বেশি সময় দেশে বড় কোনো জঙ্গি হামলা হয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জঙ্গিরা যে কোনো সময় বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের পাঁচটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকদের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। গত পাঁচ মাসের ৫টি ঘটনায় সামনে চলে এসেছে নতুন করে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি তৈরির বিষয়টি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিককালে এসব বিস্ফোরণকান্ডের সঙ্গে নব্য জেএমবি জড়িত। তবে অনেকটা নেতৃত্বহীন অবস্থায় সেলফ রেডিক্যালাইজড হওয়া এ জঙ্গি নেটওয়ার্কটি এখনো শনাক্ত করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বারবার এমন ঘটনা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি নেটওয়ার্ক শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে ঝুঁকি হ্র্রাস করা সম্ভব। আর সার্বিকভাবে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করা সঙ্গত। আমরা জানি, দেশের অনেক জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক জঙ্গিকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা মনে করি, এই অভিযানের পাশাপাশি এই ধর্মীয় অপশক্তি সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রমও জারি রাখতে হবে, যাতে ধর্মীয় নেতা, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কখনোই জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। এমন দৃষ্টান্তও আমরা দেখেছি যে, জঙ্গি সন্তানের লাশ গ্রহণেও মা-বাবা তাদের অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফলে ইতোমধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং অতীতের ঘটনাগুলোর বিচারকাজ ত্বরান্বিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এমনও অভিযোগ আছে যে, পুলিশের হাতে আটক জঙ্গিরা জেলখানায় গিয়েও অন্যদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সতর্কতা জরুরি। অন্যদিকে জেল খেটে বা শাস্তি ভোগ করে যারা বের হয়ে এসেছেন, তাদের পুনর্বাসনের দিকেও বিশেষ জোর দেয়া আবশ্যক। সর্বোপরি বলতে চাই, জঙ্গিবাদ দমনে যে সাফল্য আমাদের এসেছে তা যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।