পাঠক মত

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস একটি পরিবারের একজন যুবক সদস্য যদি অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে শুধু সেই পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, জাতি অধঃপতিত হয়। আমাদের দেশে যুবসমাজ ব্যাপকভাবে অবক্ষয়ের অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের সামাজিক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে দুর্বৃত্ততা বাড়ছে। প্রযুক্তির অকল্যাণ দিকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সভ্যতার অগ্রগতি বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বটে। প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, দিয়েছে কল্যাণকর অনেক কিছু। কিন্তু হরণ করেছে আমাদের আবেগ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে। প্রতি বারো সেকেন্ডে নাকি একটি করে ফেসবুক একাউন্ট খোলা হচ্ছে, এতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, উদ্বেগের জায়গাটা হলো মানুষ মোবাইলে ফেসবুকে সারাক্ষণ বিভোর থাকছে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের চির ধরছে। সৃষ্টি হচ্ছে সন্দেহ। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ সংগঠিত হচ্ছে। মানুষের আবেগ ও অনুভূতিতে আঘাত হানার মাধ্যম হিসেবে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। নৈতিক মূল্যবোধ বিবর্জিত মানুষ প্রযুক্তিকে তাদের কুরুচিপূর্ণ অসুস্থ অশ্লীল বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করে ফেলেছে। ফেসবুক ইন্টারনেট হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে যুবসমাজকে, ঘটাচ্ছে যুবসমাজের অবক্ষয়। এর জন্য প্রযুক্তির উন্নতি কিংবা আবিষ্কারকে দায়ী করা যায় না কোনোভাবেই। দায়ী পব্যবহারকারীরা। এছাড়া যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম আরও একটি কারণ হলো মাদক। আমাদের দেশে অপার সম্ভাবনাময় যুবসমাজ মারাত্মক মাদক ঝুঁকিতে রয়েছে। মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে খুব সহজে মাদকে আসক্ত হওয়ার সুযোগ পায় তরুণসমাজ। মাদকাসক্তির ফলে বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। শরীরে নানা অসুখ জেঁকে বসে। শারীরিক সমস্যার মধ্যে খাদ্যে অরুচি, পুষ্টিহীনতা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ, বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি হয় যার শেষ পরিণতি মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। মানসিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া। মাদকাসক্তির ফলে ব্যক্তি তার স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ফেলে। মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত যথাযথ আইন থাকা প্রয়োজন। যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন রাষ্ট্র ব্যক্তি পরিবার সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস। সন্তান কোনো অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে কিনা, কেমন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশছে ইত্যাদি বিষয়ে পরিবারের খেয়াল রাখতে হবে। তা ছাড়া পরিবারের কেউ মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়লে তাকে মাদকের খারাপ, ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখাও মাদক থেকে তাদের দূরে রাখার একটি উপায় হতে পারে। সমাজ বিনির্মাণে যুবসমাজের হিতৈষী ভূমিকা রাখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মানবিক বোধের উন্মেষ ঘটানোর জন্য জনকল্যাণকর কাজে তাদের লাগাতে হবে। বেকারত্ব, সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক বিরোধ দূর করতে হবে। কেউ যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাহলেই মুক্তি পেতে পারে যুবসমাজ, যে যুবসমাজ জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে যুগে যুগে। সাগর জামান মাগুরা