রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক

দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার বিস্তারসহ নানা খাতেই ধারাবাহিক অগ্রগতি হচ্ছে। আর এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। তদুপরি এটাও নানান সমস্যা ও সংকটে বিদ্যমান। কিছুদিন আগেই এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কক্সবাজারে ক্যাম্পে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোনের সুবিধা সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করে তা জানাতে দেশের সব মোবাইল অপারেটরকে নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। নির্দেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শুরু থেকেই মোবাইল ফোন সুবিধা না দেয়ার জন্য সব মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও তাদের হাতে সিম ও রিম ব্যবহৃত হচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়। আর এ সংক্রান্ত বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর বিটিআরসিকে জরুরি নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে আমলে নেয়া দরকার যে, নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গুরুত্ব বিবেচনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে মোবাইল ফোন সুবিধা না পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকারী বিটিআরসির কমিটির কাছ থেকে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ব্যাপক হারে সিম ও রিম ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে কমিশন। আমরা মনে করি, সঙ্গত কারণেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিলেও, সেই রোহিঙ্গাদের কারণেই সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ- যা বলার অপেক্ষা রাখ না। একদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইসু্যতে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের ক্ষমতাধর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দিলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংকট যেমন দূর হচ্ছে না, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা ভিডিও বার্তা আর সংবাদে রোহিঙ্গারা দ্রম্নত প্রভাবিত হচ্ছে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা এবং প্রশাসনও। কেননা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা ভিডিও বার্তা আর সংবাদে রোহিঙ্গারা দ্রম্নত প্রভাবিত হওয়ার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়টিও সামনে আসছে। ফলে বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরি। জানা গেছে যে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আর খবর আদান-প্রদানে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তাদের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে রয়েছে ইন্টারনেট ও উন্নত প্রযুক্তি। থ্রিজির পাশাপাশি কিছু ক্যাম্পে ব্রডব্যান্ড ও ডিশ সংযোগও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক অনলাইন টিভিতে সার্বক্ষণিক রোহিঙ্গাদের খবরও সম্প্রচার করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের রয়েছে ফেসবুক গ্রম্নপ ও পেজ। এসব গ্রম্নপ ও পেজে সার্বক্ষণিক ছবি, ভিডিও এবং লেখা আপলোড করা হচ্ছে। ফলে যে কোনো ঘটনাই মুহূর্তের মধ্যে সব রোহিঙ্গার কানে পৌঁছে যায়। আমরা বলতে চাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা ভিডিও বার্তা আর সংবাদে রোহিঙ্গারা দ্রম্নত প্রভাবিত হচ্ছে এমন বিষয় যখন আলোচনায় এসেছে, তখন এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হতে হবে। বলা দরকার যে, উখিয়া ও টেকনাফে নিবন্ধিত ৩৪টি ক্যাম্পের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার অর্ধেকের হাতেই রয়েছে মোবাইল ফোন। স্থানীয়দের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম নিবন্ধন করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী তা তুলে দিয়েছে তাদের হাতে। এসব সিম ব্যবহার করে অপরাধমূলক নানা কাজের অভিযোগ উঠেছে কিছু রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে- যা ভীতিপ্রদ। সর্বোপরি বলতে চাই, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে সামনে রেখে যেমন সার্বিক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে, তেমনিভাবে রোহিঙ্গা ইসু্য নিয়ে যে কোনো সংকট বা নেতিবাচক পরিস্থিতি রোধে উদ্যোগী হতে হবে। এ ছাড়া কোনো ধরনের সহিংস পরিস্থিতি যেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে সৃষ্টি না হয়, এই বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।