এনআরসি ইসু্য যেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা পক্ষপাতমূলক না হয়

আমরা প্রতিবেশী হিসেবে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কে বিশ্বাসী। মানবিকতায় বিশ্বাসীদের দুর্বল ভেবে কোনো অন্যায় বা অবৈধ আচরণ করলে, তাতে আমরা নিশ্চুপ থাকব না। প্রতিবাদের ভাষায় তাকে শক্তভাবে মোকাবিলা করেই শান্তিকে সমুন্নত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
আসামের মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ২০ লাখ। তার এক তৃতীয়াংশ মুসলিম। ভারত শাসিত কাশ্মীরের পর এই রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বসবাস। এদের অনেকেই তাদের অভিবাসী পূর্বপুরুষদের সূত্র ধরে ব্রিটিশ শাসনের সময় এখানে স্থায়ী হয়েছেন। আসাম রাজ্যে অবৈধ অভিবাসনও বহুদিনের উদ্বেগের বিষয়। প্রায় ছয় বছর ধরে চলা এক আন্দোলনের পর প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি চুক্তি হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা কাগজপত্র ছাড়া আসামে প্রবেশ করেছে তাদের বিদেশি বলে বিবেচনা করা হবে। এখন বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হলো তার ফলে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ হয়ে গেল অবৈধ বিদেশি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন যেমন অবৈধ অভিবাসী পিতামাতার কাছ থেকে তাদের সন্তানদের আলাদা করে অন্য জায়গায় রেখেছিল, তেমন ঘটনা ঘটেছে আসামেও। নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর চলিস্নশ লাখ মানুষ রাতারাতি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ায় এই রাজ্যে সহিংসতারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আসাম রাজ্য এখন শাসন করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। তার দল থেকে অতীতেও ঘোষণা করা হয়েছে যে অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের এই রাজ্য থেকে বের করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আসামের চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হয়েছে। এ পঞ্জিতে ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষকে আসাম তথা ভারতের বৈধ নাগরিক এবং ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষকে অবৈধ নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। গত জুলাই মাসে যে খসড়া পঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা দেখানো হয়েছিল ৪১ লাখ। সেই সময় এ বিশাল অংকের অবৈধ তালিকা দেখে আসামে এবং পশ্চিমবাংলায় হৈচৈ শুরু হয়েছিল এবং বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ এব্যাপারে বাংলাদেশ এবং ভারতের নির্বাচনের আগেই ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি অমিত শাহকে খুব আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছিল। তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে, এরা সব বাংলাদেশি মুসলমান। চাকরি-বাকরি এবং উন্নত জীবনযাপনের আশায় এসব বাংলাদেশি আসামে প্রবেশ করেছে। এখন এদের বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়া হবে। জুলাই মাসে ওই খসড়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট পুনরায় ওই খসড়া যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দেয় এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট ৩১ অগাস্টের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী ৩১ অগাস্ট চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হলো। এখন সেই পঞ্জিতে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ৪১ লাখ থেকে নেমে ১৯ লাখে দাঁড়ালো। যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসাম সরকার ঘোষণা করেছে যে, যারা অবৈধ হবে তাদের বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এখন ১৯ লাখ মানুষকে অবৈধ বা ফরেনার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই ১৯ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে কি অ্যাকশন নেয়া হবে। অ্যাকশন নেয়ার ব্যাপারে এই বার বিজেপির সুর কিছুটা নরম হয়েছে। তারা বলছে, এই মুহূর্তেই তারা ওইসব অবৈধ ১৯ লাখকে ডিটেনশনে পাঠাবে না বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। তারা অবৈধ অভিবাসীদের আর একটি সুযোগ দিয়েছে। সেই সুযোগ মোতাবেক অবৈধরা তাদের নাগরিকত্বের দাবিতে প্রথমে ট্রাইবু্যনালে যাবেন। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, এই ১৯ লাখের আপিল পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রায় ১ হাজার ট্রাইবু্যনাল গঠন করা হচ্ছে। ট্রাইবু্যনালের বিচারে সন্তুষ্ট না হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা হাইকোর্টে যেতে পারেন। হাইকোর্টের বিচারে সন্তুষ্ট না হলে তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারে যদি তারা সন্তুষ্ট না হয় তাহলে তারা কোথায় যাবেন? সেই বিষয়টি নাগরিক পঞ্জিতে পরিষ্কার করে বলা হয়নি। তবে ধারণা করা যেতে পারে যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে যারা অবৈধ থেকে যাবেন তাদের হয়তো ডিটেনশন ক্যাম্পে তথা জেলে যেতে হবে। তবে জেলে এত লাখ লাখ লোক ধরবে কিনা সেটিও একটি প্রশ্ন। সে ক্ষেত্রে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে এবং স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক হানাহানির কারণে ভারত থেকে এ দেশে হিন্দুদের সঙ্গে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, জমি ও সম্পত্তি বিনিময় করে এসেছে। একই কারণে এ দেশ থেকে অনেক হিন্দু সম্পত্তি বিনিময় করে ভারতে চলে গেছে। এমন ঘটনা বাংলাদেশের সর্বত্রই ঘটেছে। এ অবস্থায় ভারত সরকার যদি বাংলাদেশ থেকে বিনিময় করে ভারতে যাওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তবে তা অত্যন্ত অযৌক্তিক। এর পাল্টা পদক্ষেপ স্বরূপ বাংলাদেশ যদি ভারত থেকে আসা লোকদের ফিরিয়ে দেয় তবে কী মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, ভাবা যায়? তাই ভারতের উচিত, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর গুরুত্ব দিয়ে, অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে স্থানান্তরিত মানুষের নাগরিকত্ব প্রদান করে ভারতীয় বলে স্বীকৃতি দেয়া। আর অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি যদি ভারতে অবস্থান করে, তাদের ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ সাদরে গ্রহণ করবে। বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে 'অর্থ পাচার' করছে তাদের ভারত সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আসামে বসবাসরত বাঙালি অধিকার কর্মীদের মতে, 'এনআরসি' আসলে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না। তারা (হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও অসমীয় কট্টরপন্থীরা) প্রকাশ্যে মুসলমানদের হুমকি দিচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে এখানে তাই ঘটতে পারে। 'এনআরসি' ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে বর্তমান সরকার আসামের পরিস্থিতি নিয়ে দৃশ্যত চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অবশ্য এর পেছনে কূটনৈতিক কৌশল ও রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, আসাম রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্ধনে ৪০ লাখ মানুষকে উদ্বাস্তু করে দিয়েছে। যা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, জঙ্গিবাদকে উসকে দেবে।' ভারতের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যখন সব মহল থেকে সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে সেই ধারাবাহিকতায় এবার এনআরসি নিয়ে বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিজেপির কড়া সমালোচনা করে টুইটারে টুইট করে বলেন, 'রাজনৈতিক লাভ তোলার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি বিপর্যয়। দেশকে জবাব দিতে হবে তাদের। দেশ ও সমাজের স্বার্থ পরিহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে এমনটাই ঘটে। বাংলাভাষী ভাইবোনদের জন্য খারাপ লাগছে। জাঁতাকলে পড়ে ভুগতে হয়েছে তাদের।' কংগ্রেস বলছে, সম্প্রদায় বিশেষের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষে বিদ্বিষ্ট হয়ে বিজেপি এই পঞ্জি বানিয়েছে। আর বিজেপি বলছে, হাজার হাজার কর্মী নাগরিক পঞ্জি প্রণয়নে নিয়োজিত হয়েছিল তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। তাহলে ব্যাপাটা কী দাঁড়াচ্ছে? নাগরিক পঞ্জি ওয়েস্ট পেপার বাক্সে ছুড়ে ফেলে দেয়ার মতো অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, এই নাগরিক পঞ্জির ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, নাগরিক পঞ্জিতে যত লাখ মানুষই অবৈধ হোক না কেন, তাদের একজনও বাংলাদেশী নয়। সুতরাং নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বাংলাদেশের কোনো মাথাব্যাথা নেই। এই অবস্থায় নাগরিক পঞ্জি প্রণয়ন বিজেপির জন্য হিতে বিপরীত হতে চলেছে। আসামের নাগরিক তালিকা তৈরির এই উদ্যোগে কতটা ত্রম্নটি বা পক্ষপাতিত্ব রয়েছে তার নানা দৃষ্টান্ত দেশটির বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। ভারতের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি মরহুম ফখরুদ্দিন আলী আহমদ ছিলেন আসামের একজন মুসলিম। সেখানকার এনআরসিতে মরহুম ফখরুদ্দিনের ভাইয়ের পরিবারকে অনাগরিকের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনীতে তিন দশক ধরে চাকরি করে অবসর গ্রহণকারী একজনের পরিবারকে অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, এক ভাইয়ের পরিবার নাগরিক তালিকায় রয়েছেন, কিন্তু আরেক ভাইয়ের পরিবারকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পিতা নাগরিক তালিকায় রয়েছেন কিন্তু পুত্র বাদ পড়ে গেছেন। বিজেপির মূল সংগঠন, সংঘ পরিবারের দুটি প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে। এর প্রথম এজেন্ডাটি হলো ভারতকে হিন্দুত্ববাদের দেশে রূপান্তর করা। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, হিন্দুত্ব হবে ভারতীয়দের মূল পরিচয়। এখানকার সব ধর্মবিশ্বাসীকে হিন্দু পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। এখানে মুসলিমরা হবেন হিন্দু-মুসলিম, খ্রিস্টানরা হবেন হিন্দু-খ্রিস্টান, বৌদ্ধরা হবেন হিন্দু-বৌদ্ধ। আরএসএস মনে করে হিন্দুত্বের কৃষ্টি সংস্কৃৃতি গ্রহণ করেই অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্ম পালন করবে। আরএসএস ভারতের ৮০ শতাংশ নিম্ন ও উচ্চবর্ণের হিন্দুকে এই মতাদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। আসামে চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হলে আসামে বিপুল মানুষ রাষ্ট্রীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলবে বলে শঙ্কা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকারের ক্ষেত্রে এ এক বড় বিপর্যয় বটে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০১৪-এ লক্ষ্য নিয়েছিল, এক দশকের মধ্যে 'রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকতা'র সমস্যাটি দূর করা যাবে। এই উচ্চাভিলাষী কর্মসূচির মধ্যেই আসামে খসড়া নাগরিক পঞ্জিতে (এনআরসি) গত বছর ৪০ লাখ মানুষের 'নাগরিকত্ব হারানো'র ঘটনাটি ঘটে। এটা ছিল একটা বৈশ্বিক পশ্চাদ্ধাবন। আসামের ঘটনাবলি বহুভাবে বিভিন্ন মানবাধিকার সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ১৫ অনুযায়ী, 'প্রত্যেক মানুষের একটা জাতীয়তার অধিকার রয়েছে।' প্রতিটি দেশের নিজস্ব আইনের আলোকে মানবাধিকারের ওই সনদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। 'নাগরিকত্ব' বিষয়ে কোনো রাষ্ট্র এমন কোনো অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে না, যা মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ওই অগ্রগতিকে পিছিয়ে দেয়। আসামে তা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। মানবাধিকার সনদের 'অনুচ্ছেদ ১৫'কে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের নির্দেশনা হিসেবে। এই অনুচ্ছেদ ধরে নেয়, প্রত্যেকের অন্তত একটি দেশে নাগরিকত্ব থাকবে। এই বিবেচনায় কারও রাষ্ট্রবিহীন হওয়া বা কাউকে রাষ্ট্রবিহীন করা অন্তর্নিহিতভাবেই মানবাধিকারের জন্য বিপর্যয়কর। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের পাশাপাশি জাতিসংঘ ১৯৬১ সালে গ্রহণ করে 'কনভেনশন অন দ্য রিডাকশন অব স্টেইটলেসনেস'। আন্তর্জাতিক এই সনদ অনুযায়ী, প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে এটা দেখা, মানুষ যাতে রাষ্ট্রবিহীন না হয়ে পড়ে। ভারত এ যাবত এ জাতীয় বিপর্যয়কর বা অমানবিক কোনো কাজ করেনি। সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের প্রতি অবমাননাকর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত একদিন করতে হবে। কেননা, স্রষ্টা এহেন অবমাননাকারীদের যথার্থ ও সমুচিত প্রতিদান দিয়ে তাদের দম্ভকে অবনমিত করে থাকেন। মৌলবাদ বা হিন্দুত্ববাদে নিজের বা প্রতিবেশীর শান্তি বিঘ্ন ঘটে তা কখনোই কাম্য নয়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভু্যদয় ঘটেছে বিভিন্ন ধম-বর্ণ-নির্বিশেষ আমরা বাঙালি। বাঙালি জাতীয়তাবাদে আমরা বিশ্বাসী অধিকন্ত গণতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িকতার নীতিতেও আমরা বিশ্বাসী। এ দেশে বেশিরভাগ মুসলমান বলে আমরা কাউকে সংখ্যালঘু বা খাটো করে দেখি না। আমরা মানুষের মনুষ্যত্বে বিশ্বাসী। এখন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধর্মীয় চেতনামুক্ত হয়ে মানবিক, অহিংস বাংলাদেশ মূল্যবোধে বিশ্বাসী। কোনো উসকানি, হঠকারিতা, শক্তি প্রদর্শনকে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বাস করে না। রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক যে মানবিকতা প্রদর্শন হয়েছিল। আসাম বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে তা আমরা কোন যৌক্তিতে প্রদর্শন করতে যাব। অন্য দেশে দীর্ঘদিন অবস্থান সূত্রে বা ভিত্তিতে নাগরিক হিসেবে বসবাসের পর কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলক রাষ্ট্রহীন বা নাগরিক তালিকা বহির্ভূত হয়ে যায় তাতে আমাদের কি আসে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের উদার বা মহানুভব হয়ে নিজের ক্ষতি করার মানসিকতা অন্তত স্বাধীন বাঙালি হিসেবে আমাদের নেই। কারোর চাপিয়ে দেয়া বা শক্তির মহড়ায় আমরা আমাদের অস্তিত্বে হুমকি বা উদ্বেগে কখনই নিজেদের আড়স্ত হয়ে নিজেদের গুটিয়ে রাখবো না। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কে বিশ্বাসী। মানবিকতায় বিশ্বাসীদের দুর্বল ভেবে কোনো অন্যায় বা অবৈধ আচরণ করলে, তাতে আমরা নিশ্চুপ থাকব না। প্রতিবাদের ভাষায় তাকে শক্তভাবে মোকাবিলা করেই শান্তিকে সমুন্নত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: কলামিস্ট ও গবেষক