ভূমি নিবন্ধনে ব্যাপক দুর্নীতি

রিপোর্ট আমলে নিন

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্নীতি আমাদের দেশে বহুল উচ্চারিত বিষয়। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। দুর্নীতি রাহুগ্রাসের মতোই সমাজের সর্বস্তরে জেঁকে বসেছে। সর্বগ্রাসী এই দুর্নীতি সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বলে আসছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি কমাতে তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানান পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বাস্তবতা হলো, এরপরও দুর্নীতি কমছে না। সম্প্রতি টিআইবির এক গুণগত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, ভূমি নিবন্ধনের নানা পর্যায়ে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। সোমবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। 'ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক সম্মেলনে গবেষকরা বলেছেন, ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি একটি সেবা খাতের এহেন দুর্নীতি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের ঘাটতি ব্যাপক, এ খাত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ঘুষ নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে হয়রানি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ভূমি নিবন্ধন আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে। এখানে নিয়োগ-পদোন্নতিতেও দুর্নীতি ব্যাপকতা পেয়েছে। টিআইবি'র গবেষণায় উঠে আসা এ তথ্য যে অত্যন্ত পরিতাপের তা বলাই বাহুল্য। সরকারের অন্য খাতগুলোর মতো এ খাতেও আইনি দুর্বলতা, সেবার মানোন্নয়নে ও নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে, জনবল, অবকাঠামোগত, পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ঘাটতি পেয়েছে গবেষকরা। যে কারণে এ খাতে ডিজিটালাইজেশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে। অবকাঠামোগত দিক থেকে অধিকাংশ ভূমি অফিস জরাজীর্ণ। আর সুশাসনের ঘাটতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত করছে। গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, অন্য খাতের মতো ভূমি দলিল নিবন্ধন অফিসে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রয়েছে। আর এ পরিস্থিতি সুশাসনের ঘাটতিকে জটিল ও দুর্নীতিকে আরও উগ্রতর করে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক সত্য হলো, দেশের সেবাখাত মানেই সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতিপ্রবণ। এ অবস্থা একটি দেশের সেবা খাতকে যে অন্ধকারের দিকেই টেনে নিচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভূমি অফিসের দুর্নীতি বহুদিন ধরেই আলোচনায় আছে। একটি দলিলের নকল তোলার জন্য সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে যদি ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়; দলিল নিবন্ধনের জন্য যদি দলিল প্রতি দলিল লেখক সমিতিকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়- তাহলে এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে! তিক্ত হলেও সত্য যে, দেশের এই সেবা খাতটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলে এলেও দেখারও যেন কেউ নেই! এ ছাড়া এ খাতে বদলিজনিত ঘুষ গ্রহণের যে তথ্য তুলে ধরেছে টিআইবি তাও আঁতকে ওঠার মতো। আমরা মনে করি, দেশের সার্বিক মঙ্গল ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে দ্রম্নততার সঙ্গে এই সেবা খাতকে দুর্নীতির বাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, টিআইবির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদেক্ষপ গ্রহণ করবে। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার জাগরণ ঘটলে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা অসম্ভব কোনো বিষয় নয় বলেই আমাদের ধারণা। এ ছাড়া দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কঠোর হয়ে, দুর্নীতির অংশীজনদের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করা গেলে, দুর্নীতিপরায়ণদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে- সেবাগ্রহীতারা একদিকে যেমন হয়রানি থেকে রক্ষা পাবেন, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।