অর্থ সংকটে পুঁজিবাজার

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বারংবার ধসের খবর আসছে দেশের পুঁজিবাজার থেকে। বৃহস্পতিবার সহযোগী একটি গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছে, গত বুধবার পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটে। আর এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক ৭৬ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৯২৪ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। বলাই বাহুল্য, কিছুদিন ধরে বাজারে তারল্যসংকট চলছে। কমে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগ। আর এ তথ্য উঠে এসেছে গণমাধ্যমের নানান প্রতিবেদনে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এ অবস্থানকে অত্যন্ত শঙ্কাজনক হিসেবেই বিবেচনা করছেন। দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজির বিষয়টি নানাভাবেই আলোচিত। এর আগে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পুঁজি হারিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে। অপরদিকে পুঁজিবাজারের এহেন দশা থেকে উত্তরণে বিশেষজ্ঞরা বাজার উন্নয়নে সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের নানান পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারও নানামুখী প্রণোদনা চালু করার পাশাপাশি সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিলেও তাতে পুঁজিবাজারের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। তবে মাঝে মধ্যে যে সূচকের অগ্রগতি ঘটেনি তেমনটিও নয়। এরপরও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচেনায় নিয়ে 'পুঁজিবাজার কি আদৌ স্থিতিশীল হবে'- এমন প্রশ্নও করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অপরদিকে জানা যায়, বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রীর কাছে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারেও ধস চলছে। সিএসইর প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট পুনর্বিবেচনা করা, বাজার উন্নয়নে ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটিং কমিটি গঠন করা, আইসিবিকে আরো শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিসহ সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে যে কোনো নীতিনির্ধারণী বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ব্যাপারে সরকার তথা যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রম্নত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে, বাজারে যে তারল্য সংকট চলছে তার ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব অনিবার্যভাবে দেখা দেবে। এটা মানতে হবে, ক্রমাগত লোকসান গুণতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলো নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে টাকার অভাবে। এর জন্য দায়ী বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। অন্যদিকে শেয়ারবাজার নিয়ে কারসাজি, মানহীন কোম্পানির আইপিও, সুশাসনের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টদের দ্বন্দ্বও বড় কারণ। বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমেছে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধনের ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। একটি দেশের অর্থ বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় খাতটির প্রতি যদি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট ঘটে তাহলে তা কিছুতেই হেলাফেলা করার সুযোগ থাকে না। স্মর্তব্য যে, নানান সময়ে এখাতের দুর্নীতির বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। আমরা এর আগে দেখেছি, এ সংক্রান্ত মোকদ্দমাও জারি হয়েছে। কিন্তু শেষাবধি কোনো দায়ী কর্মকর্তার শাস্তি হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। আর গত জুনে বাজেট ঘোষণার পর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা কমে আসার যে তথ্য উঠে এসেছে তাও আশঙ্কাজনক এবং বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এর অবসানই প্রত্যাশিত। প্রত্যাশা থাকবে, বহুল আলোচিত এই পুঁজিবাজারের প্রতি যাতে বিনিয়োগকারীর আস্থার সংকট না ঘটে, সরকারকে তেমন উদ্যোগই নিশ্চিত করতে হবে। বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিএসইসির দ্বন্দ্বেরও নিরসন হওয়া সমীচীন। পাশাপাশি ব্যাংকের সুদহার, তারল্য পরিস্থিতি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ, মজবুত মৌলভিত্তির ও বড় মূলধনী কোম্পানির তালিকাভুক্তিসহ যেসব নির্দেশকের সঙ্গে পুঁজিবাজারের ভাগ্য জড়িয়ে আছে, সেগুলো অনুকূলে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজার তার হারানো গৌরব ফিরে পাক, সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।