পাঠক মত

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নারীর সামাজিক অবস্থান 'নারীর সামাজিক অবস্থান দ্বারাই সমাজ প্রগতির মাত্রা নির্ধারণ করা চলে' কার্ল মার্কসের এই কথাটি অনুধাবন করতে গেলেই দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে ভয়াবহ অন্ধকারে নিমজ্জিত আমাদের আজকের এই সমাজব্যবস্থা, প্রগতির আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আমাদের এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সচিত্র। আমাদের উন্নয়নের প্রদীপের নিচে ঘোর অন্ধকার কারণ আমরা আমাদের সমাজের অর্ধেকাংশ তথা নারীকুলকে বিভিন্ন দমন-পীড়ন, নির্যাতন আর সহিংসতার কালো থাবা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। নারী নির্যাতন-নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের প্রতিদিনকার খবরের শিরোনাম হচ্ছে। সেই সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। চরম নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতিকে করে তুলছে আরও ভয়ংকর। আমরা ধেয়ে চলছি ভয়ানক অস্থির সময়ের দিকে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুসারে গত বছরে মোট ৩৯১৮ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৪২টি যার মধ্যে ১৮২ জন গণধর্ষণের শিকার হয়। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ১২৮ জনকে, শ্লীলতাহানির শিকার ৭১ জন, যৌন নির্যাতনের শিকার ১৪৬ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ১৯ জন, উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করে ৩০৫ জন। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৮ দিনে ২৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পারিবারের সদস্যদের দ্বারা শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, ফতোয়াবাজদের নিপীড়ন, কন্যা শিশুদের প্রতি অবহেলাপূর্ণ আচরণ, সর্বোপরি নারীর অবমূল্যায়ন মারাত্মকরূপ ধারণ করেছে যার সবটা খবর আমরা সংবাদ মাধ্যমে পাই না। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় 'সার্ভে অন উইমেন রিভিলস' নামক প্রতিবেদনে এ দেশে নারীদের ওপর পারিবারিক নির্যাতনের একটি ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। বিবিসি ও ইউএনএফপিএ কর্তৃক দেয়া এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ গৃহসহিংসতার শিকার হন, ওই নারীদের ৭৭ শতাংশ প্রতিনিয়ত প্রহৃত হন, এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ নির্যাতিত নারীর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া অধিকাংশ নারী যৌতুকলোভী সংকীর্ণ মনের স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হন। নারীদের ওপর এসিড নিক্ষেপ, আগুন দেয়া ও জোরপূর্বক তালাক দেয়া এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব পাশবিক ঘটনা নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১১টি করে মামলা করা হলেও মামলা নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত কম। গত বছরের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ৪১টি হত্যা ও ১৮টি ধর্ষণের বিচার হয়েছে যা সত্যিই হতাশাজনক। সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নির্যাতিত নারীরা মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না অথবা তাদের চাপের মুখে রেখে কথা বলতে দেয়া হয় না। বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় নির্যাতনের শিকার নারীরা চাইলেও অনেক সময় আইনের আশ্রয় নিতে পারে না। নারীর ওপর পুরুষের একচেটিয়া ক্ষমতার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের নির্যাতন আরও বেড়ে চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি বা আইনের ফাঁক-ফোকর। মূলত সামাজিক প্রেক্ষাপট, পারিবারিক শিক্ষা-মূল্যবোধের অভাব, সংস্কৃতির পরিবর্তন, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি নানাবিধ কারণে নারী নির্যাতন ক্রমাগত বেড়েই চলছে। নারীর প্রতি সহিংসতা সভ্য সমাজের জন্য অভিশাপ। তাই যে কোনো মূল্যে এই অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে প্রথমে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং জাগ্রত করতে হবে সুপ্ত মানবতাবোধকে। নারী সহিংসতা রোধে যেসব আইন আছে সেগুলোর কোনো বাস্তবায়ন নেই। এসব আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষও সচেতন নয়। সর্বোপরি আইন প্রয়োগকারী ও আইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। তাই এই ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে হবে এবং প্রচলিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতার শিকার প্রতিটি নারীর পাশে পর্যাপ্ত সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। যারা মুখ খুলে কথা বলতে ভয় পায় তাদের সাহস দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নির্যাতিতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদেরও সোচ্চার হতে হবে। নারীদের কথা বলতে হবে নিজের অধিকার আদায়ে। নির্যাতনকারী সমাজের যেই হোক না কেন, জোরালো কণ্ঠে কথা বলতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। সচেতন হতে হবে নিজেদের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠায়। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে অর্থনৈতিক ও মানুষিক মুক্তি অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে নারীকে। আমেনা আক্তার প্রিয়া \হশিক্ষার্থী, সোনাগাজী, ফেনী