বন্ধ হয়ে গেছে ৪৬ গার্মেন্ট

তৈরি পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে হবে

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শনিবারের যায়যায়দিনের খবরে জানা যায়, দেশের ৪৬টি গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে প্রায় সাড়ে পঁচিশ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। বিপুল জনসংখ্যা ও বেকারত্বের ভারে নত বাংলাদেশের জন্য এমন একটি তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগ জাগানিয়া। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের জন্য দেশের উলেস্নখযোগ্য একটি খাত তৈরি পোশাকশিল্প। যেখানে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। লক্ষ্য করা যায়, অতীতে নানান সময়ে এই খাতকে ঘিরে নানান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি তা নিরসন হয়ে আবারও উৎপাদনে ফিরে এসেছে কারখানাগুলো। বলাই বাহুল্য, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে উৎপাদিত গামেন্টপণ্যের চাহিদা বেড়েছে বিদেশে। গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে। দেশ এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের মহাসোপানে। দেশের এমন একটি অবস্থানে এসে গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া অত্যন্ত আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গার্মেন্ট খাতের চলমান এ অবস্থা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে। প্রতিবেদন মতে, গত সাড়ে ৬ মাসে ৪৬টি তৈরি পোশাক কারখানা (গার্মেন্ট) বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৪৫৩ শ্রমিক ও কর্মকর্তা। এমনিতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব শুরু হয়েছে। এর আগে বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের দেশের অর্থনীতিতে পড়েনি তার মূল কারণ হলো- এই গার্মেন্ট শিল্প। ফলে সেই গার্মেন্ট কারখানা যদি পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় এবং হাজার হাজার শ্রমিক বেকার পয়ে পড়েন তখন বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়ে বৈকি। আমরা মনে করি, এ অবস্থা থেকে এই শিল্পকে বাঁচাতে হবে। এই শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প থাকাও উচিত নয়। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, বিশ্লেষকরা বারবার বলে আসছেন গার্মেন্টের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আগামী ১০ বছর আমরা খুব ভালো করতে পারি, এমন মন্তব্য করে বিজিএমইএ সভাপতিও বলেছেন, আমাদের ওই জায়গায় যেতে হবে। বর্তমানে ভিয়েতনাম ভালো অবস্থানে আছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেছেন, ভিয়েতনামের ব্যবসা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের কেন বাড়ছে না বা কেন আমরা ভালো করছি না? বিজিএমইএ সভাপতির এমন প্রশ্ন অযৌক্তিক হতে পারে না। যখন একের পর এক ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর এমন খবর আসছে তখন এ খাতের উদ্যোক্তা বা নীতিনির্ধারণী মহল কি করছেন- এমন প্রশ্নও করা যেতে পারে। আমরাও বারবার বলে আসছি, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাগুলো যেমন শনাক্ত করতে হবে, তেমনি এ খাতে যে বিপুল সম্ভাবনার কথা বলা হয়ে থাকে তা কাজে লাগাতে হবে। এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, এই শিল্পে তখনই সর্বোচ্চ উৎপাদন আশা করা যায়, যখন কর্মপরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা পাবেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ এসেছিল তৈরি পোশাক খাত থেকে। তাহলে এখন কেন কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে! সর্বোপরি বলতে চাই, দেশের রাজস্ব খাতকে সমৃদ্ধ করতে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্ববাজারে ক্রমেই যখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির তথ্য আসছে তখন আমরা বলতে চাই, এ খাতের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার বরাবরই পোশাক খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে আসছে তা আমরা জানি। এ খাত দেশের ক্রমবধর্মান বেকারত্ব নিরসনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে অসচ্ছল ও দারিদ্র্যপীড়িত নারীদের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে। সুতরাং কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র কি-না সে বিষয়েও সরকারকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিকরা শিল্পের প্রাণ, সুতরাং সেই শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়লে তা আশঙ্কাজনক। পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নততার সঙ্গে কাযর্কর উদ্যোগ নিক- এটাই আমাদের চাওয়া।