পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা

যে কোনো উপায়ে প্রতিষ্ঠা করুন

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের পরিবহন ব্যবস্থার শৃঙ্খলা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। যেহেতু নিত্যদিনের যাত্রায় দেশের মানুষের নির্ভরতা সড়ক পথেই বেশি, কিন্তু যাত্রীদের জন্য সড়কপথ আজ কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়া অযৌক্তি হতে পারে না। বলাই বাহুল্য, দেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সড়কপথ। যাত্রী পরিবহন থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন সবক্ষেত্রে সড়কপথের গুরুত্ব তুলনাহীন। সুতরাং সেই সড়কপথে শৃঙ্খলা থাকবে, নিরাপদ হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সড়কে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতু্য। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, সড়কপথে যাত্রা শুরু করে কোনো যাত্রীই নিশ্চিত নয় যে, নিরাপদে শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। যানবাহনে চেপে বসলে সব সময় এক অজানা আশঙ্কা তাড়া করে, কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এই রকম শঙ্কা নিয়ে যাত্রাপথে আতঙ্কের মধ্যে চলতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। ফলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, সড়কপথের নিরাপত্তা এবং পরিবহনের শৃঙ্খলা নিয়ে। শনিবারের যায়যায়দিনে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত এক মাসে রাজধানীতে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় কিংবা চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর বাংলামোটরে ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের চাপায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবিস্নউটিসি) কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী চৌধুরী পা হারান। চলতি মাসের ৫ তারিখ বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী-আমতলীর মাঝামাঝি মহাখালী উড়ালসড়কের পাশের রাস্তায় ক্যান্টনমেন্ট মিনিবাস সার্ভিসের একটি বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফারহানাজের মৃতু্য ঘটে। ওই দিন উত্তরায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের বাসের ধাক্কায় সংগীত পরিচালক ও সুরকার পারভেজ রব নিহত হন। একই পরিবহনের অপর একটি বাসের চাপায় ৭ সেপ্টেম্বর পারভেজ রবের সন্তান আলভী আহত এবং আলভীর বন্ধু মাহমুদ নিহত হন। একইদিন রাতে উত্তরার কামারপাড়ায় বাসের ধাক্কায় রাশেদ হাওলাদার নামের এক ট্রাক হেলপার নিহত হন। ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ডেমরায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় কামরুল হাসান ওরফে সানি নিহত হন। সড়কে প্রাণ হারানোর অনিবার্য এ অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলছে না স্বয়ং পরিবহন শ্রমিকদেরও। ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মাতুয়াইলে ট্রাকের সঙ্গে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষে বাসের সহকারী আবদুল কুদ্দুস (৪৫) নিহত হন। এই যদি হয় সড়কের নিত্যদিনের চিত্র তাহলে দেশের অতীব জরুরি এ খাতের শৃঙ্খলা কোথায়- এমন প্রশ্ন কিছুতেই অযৌক্তিক হতে পারে না। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুসারে গত পাঁচ বছরে ১২ হাজার ৫৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এ তথ্য স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কের অন্যতম কারণ। এটা স্বীকার করতে হবে যে, দেশের সড়কগুলোয় শৃঙ্খলা আনতে বেশ কয়েকটি সড়ককে ফোর লেন করা হয়েছে। আন্ডারপাস, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ৫টি আন্তর্জাতিক রুটে বাস চলাচল করছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা, শৃঙ্খলা, চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ম্য, অযাচিত প্রতিযোগিতা এসব কিছুই কমেনি। ফলে সড়কে প্রতিদিন রক্ত ঝরছে। অকালে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ পথচারী কিংবা যাত্রীরা। সঙ্গত কারণে এ অবস্থার অবসানই কাম্য। আমরা বলতে চাই, যাত্রী নিরাপত্ত নিশ্চিতে এবং প্রাণহানি রোধে যে কোনো উপায়ে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। দুর্ঘটনা ঘটবে না এমন দৃষ্টান্ত তো হাতিরঝিল প্রকল্পে চক্রাকার বাসের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত। তাহলে অন্যান্য সড়কপথে কেন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। নানান সময়ে পরিবহন খাতে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, এখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে এই প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য রোধেও কঠোর হতে হবে সরকারকে। মনে রাখা দরকার, এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত না হলে আমাদের উন্নয়ন ও অর্জনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। সরকার, মালিক ও শ্রমিক সবার আন্তরিকতায় দেশব্যাপী নিরাপদ সড়কপথ গড়ে উঠুক, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হোক, রোধ হোক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি- এটাই দেশবাসীর চাওয়া।