বাল্যবিবাহ

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জরুরি
বাল্যবিবাহ যে একটি ভয়ানক সমস্যা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া পরিতাপের বিষয় হলো- সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করলেও বাল্যবিবাহ রোধ হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি বাল্যবিবাহ বন্ধের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা গেছে, গত শুক্রবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ছয় স্কুলছাত্রীর বিবাহ বন্ধ হয়েছে, এছাড়া একই দিন সাতক্ষীরায় দুই ছাত্রী এবং মেহেরপুরে এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। আর বরিশাল ও শেরপুরে বাল্যবিবাহ দেয়ার কারণে অভিভাবক, বরসহ চারজনকে কারাদন্ড ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমরা বলতে চাই, দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা বিস্তৃত হচ্ছে, তারপরেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সংকট দূর হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহর মতো ভয়ানক সসম্যাকে পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন উপেক্ষা করে কম বয়সে ছেলেমেয়েরা বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসে এমনটি বারবার আলোচনায় এসেছে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থা বেশি শোচনীয়। ভুলে যাওয়া যাবে না, বাল্যবিবাহের মধ্যদিয়ে কোনো মেয়ের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা, শিক্ষালাভ, স্বাবলম্বী হওয়ার মতো বিষয়গুলো হুমকির মুখে পড়ে। অল্প বয়সে বিবাহ হওয়া মানেই সচেতন নাগরিকের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হওয়া। সুতরাং আমরা মনে করি, বাল্যবিবাহের মতো এই সামাজিক অপসংস্কারকে প্রতিরোধ করতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এবারে বাল্যবিবাহ বন্ধের যে খবরটি সামনে এলো, তা অত্যন্ত সুখকর। ফলে এভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে। তবে একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, বাল্যবিবাহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সবচেয়ে জরুরি হলো সচেতনতা এবং সুশিক্ষা। অভিভাবকসহ সমাজের দায়িত্বশীল মানুষের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মনে করি, বাল্যবিবাহের অভিশাপ যেন কাউকে গ্রাস করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া যাবে না। মনে রাখা দরকার, বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজে অতি প্রাচীন একটি সমস্যা। শিক্ষা ও সভ্যতার আলো বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এই অভিশাপ থেকে সমাজ ক্রমেই মুক্তি লাভ করছে এটা সত্য, কিন্তু সমাজে এখনো এমন মানুষের সংখ্যা অনেক, যারা বাল্যবিবাহ দিতে উদগ্রীব। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে যেমন সুশিক্ষা জরুরি, তেমনিভাবে সচেতনতা অপরিহার্য। অনেক অভিভাবক ভালো কোনো সম্বন্ধ পেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বয়সের দিকে না তাকিয়েই বিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। বিশেষ করে বাল্যবিবাহের মধ্যদিয়ে মেয়েদের কত বড় ক্ষতি হতে পারে এটা ভাবেন না। এছাড়া মেয়ের শারীরিক বৃদ্ধি পূর্ণতা পাওয়ার আগে বিবাহ দিলে কী ধরনের ক্ষতি হয়, সে সম্পর্কে অজ্ঞতার বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, এই সামাজিক অসুস্থতা রোধ করতে ব্যাপক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সর্বোপরি বলতে চাই, যেভাবে এক দিনে নয়টি বাল্যবিবাহ বন্ধের খবর পত্রিকায় এসেছে তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও বেশি তৎপর হোক এমনটি কাম্য। কেউ যেন বাল্যবিবাহ দিতে উৎসাহ বোধ না করে সেই উদ্যোগও জারি রাখতে হবে। একই সঙ্গে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যবিবাহর মধ্যদিয়ে একটা মেয়ের জীবন কতটা বিপদের মুখে পড়ে তা অভিভাবকদের অনুধাবন করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।