পুঁজিবাজার পরিস্থিতি

যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের অর্থনীতি যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন পুঁজিবাজার নেমে যাচ্ছে- এমন খবর সামনে এলে তা আমলে নেয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি যায়যায়দিনে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে, জানা যাচ্ছে যে, পুঁজিবাজারের একজন ছোটো বিনিয়োগকারী ২০১০ সালে ৬৬ লাখ টাকা দিয়ে শেয়ারবাজারে ব্যবসা শুরু করে এখন তার বিনিয়োগ ছয় লাখ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে তার প্রশ্ন, পুঁজিবাজার আর কবে ভালো হবে? এ ছাড়া উলেস্নখ্য, এমন দিশেহারা পরিস্থিতি দেশের লাখ লাখ ছোটো বিনিয়োগকারীর বলেও জানা গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এর শেষ কোথায়? আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। তথ্য মতে জানা যায়, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পুঁজিবাজারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহলকে। এ ছাড়া খোদ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যা কিছু করা দরকার এ সরকার তাই করবে। তারপরও কেন শেয়ারবাজারের এ বেহাল অবস্থা এই প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের। আমরা মনে করি, পুঁজিাবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, একজন অধ্যাপক বলেছেন, বাজার ভালো করার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় বিবেচনা করা দরকার। প্রথম বিষয় হচ্ছে, একটি কোম্পানি ভালো পারফরম্যান্স করছে কি না। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে কি না। তৃতীয়ত, ম্যাক্রো অর্থনীতি ভালো আছে কি না। চতুর্থটি, মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে কি না। শেয়ার কেনার আগে একজন বিনিয়োগকারীর এসব বিষয় বিবেচনা করা দরকার। এ ছাড়া সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে চাইলে বাজারের পাশাপাশি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে। ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ করার জন্য বন্ড মার্কেটকে সক্রিয় করতে হবে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। আমরা বলতে চাই, সার্বিকভাবে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যেমন যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। একইসঙ্গে এটাও আমলে নেয়া সমীচীন যে, বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বলে যখন জানা যাচ্ছে, তখন এ বিষয়টিও সুখকর নয়। কেননা, বিনিয়োগকারীরা যদি হতাশ হন তবে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এ ছাড়া এ দেশের চেয়ে খারাপ অর্থনীতির দেশের পুঁজিবাজারেও এ রকম অবস্থা দেখা যায় না, এমন বিষয়ও উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই পুঁজিবাজার নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। কেননা, পুঁজিবাজারে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনছেন এমন হতে থাকলে বিষয়টি কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়। এ ছাড়া জানা গেছে, বাজারে ধারাবাহিক দরপতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, কারসাজি, মানহীন কোম্পানির আইপিও, সুশাসনের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টদের দ্বন্দ্বকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের বক্তব্য, বাজারের বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা একেবারে নেই। আমরা মনে করি, আস্থার সংকট তৈরি হলে তার প্রভাব সুখকর হতে পারে না। ফলে আস্থা ফেরাতে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়নের উদাহরণ হতে যাচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ এখন এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে গত দুই যুগে সিঙ্গাপুর ও হংকংকে ছাড়িয়েছে। ফলে সেই হিসাবে পুঁজিবাজারও বাড়ার কথা; কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র- আর এতে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন এমনটিও জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন পর্যবক্ষেণ করতে হবে, তেমনিভাবে সংকট অনুধাবন করে তা নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমলে নেয়া জরুরি যে, এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, শেয়ারবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ধসের জন্য মুষ্টিমেয় স্বার্থের প্রতাপ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভঙ্গুরতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। আমরা মনে করি, মুষ্টিমেয় স্বার্থের প্রতাপে যদি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তা পরিতাপের। ফলে সামগ্রিক চিত্র আমলে নিয়ে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।