পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি

দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভারত থেকে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। দেশের খুচরা বাজারে মাত্র দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। যা রীতিমতো বিস্ময়কর। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এই তথ্য তুলে ধরেছে। রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ ৪৭ থেকে ৫০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ করে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম অধিকমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- কী কারণে পেঁয়াজের দাম এত বেড়েছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কি কম? ভারত থেকে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়ায় অর্থ এই নয় যে, রাতারাতি পেঁয়াজের দাম এত বেড়ে যাবে। ভারত ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ নতুন মূল্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা এর আগেও বলেছি মূলত অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। তারা একেক সময় একে অজুহাত দাঁড় করায়। যেমন বাড়িয়েছে পেঁয়াজের দাম। এর আগে পবিত্র রমজান বন্যা অতিবৃষ্টির অজুহাত তুলে তারা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছিল। আর এখন বাড়িয়েছে চাল ও পেঁয়াজের দাম। কোনো পণ্যের দাম যদি ১ লাফে ২০ টাকা বৃদ্ধি পায় তা হলে এর চেয়ে দুঃখ ও হতাশাজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। রন্ধনশিল্পে পেঁয়াজের অপরিহার্যতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। \হনিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। কীভাবে জনসাধারণের পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায় সেদিকেই তাদের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের অসুস্থ ও অতিলোভী মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। আসলে পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। অতীতেও আমরা লক্ষ্য করেছি, তারা এ ধরনের অপকর্ম করেছেন। দুই বছর আগে পেঁয়াজের কেজি হয়েছিল ১২০ টাকা। এবারও ওই দিকেই যেতে চাচ্ছেন তারা। এটা তাদের ব্যবসায়িক অসুস্থ সংস্কৃতি। এটা হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে তো পেঁয়াজের ঘটতি দেখলাম না। কার্যকরী বাজার তদারকি ব্যবস্থা না থাকায়, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। এরা জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজার সন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে নানা অজুহাত তুলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দ্রম্নত ধনী হবে এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। ফলে তাদের কাছে দেশের অসহায় জনগণ জিম্মি হয়ে পড়ে। ক্ষেত্র বিশেষ সরকারও তাদের কাছে জিম্মি। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। বলা হচ্ছে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করবে। সরকারের গোডাউনেও মজুদ নেই পেঁয়াজ। তারপরও ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের এই উদ্যোগ বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন চাল-পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর ও কঠোর উদ্যোগই পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে।