প্রাথমিকে শিক্ষার মান

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ হলেও এই শিশুরা কতটা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা প্রয়োজন, বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই বাংলা পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চেয়েও বেশি। তথ্য মতে, গত মঙ্গলবার সানজানা চৌধুরীর লেখায় বিবিসি এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি নিয়মানুসারে শিশুদের বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ওই শ্রেণিতে পড়ার দক্ষতা শিশুটির নেই। আমরা বলতে চাই, যখন এমন বিষয় সামনে আসছে যে, ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই বাংলা পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চেয়েও বেশি- তখন তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার ভিত গড়ে ওঠে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং যথাযথ মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত, আমরা উলেস্নখ করতে চাই, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তঃসারশূন্য পাঠের কথা জানিয়েছেন একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি বলেছেন, হয়তো বয়স দেখে একটা বাচ্চাকে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি করা হলো- কিন্তু পরে দেখা যায় যে, তারা বাংলা-ইংরেজি রিডিং পড়তে পারে না। কিছু বাচ্চা অক্ষরই চিনে না। এ ছাড়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন বিষয়ও যে, দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে পঠন প্রক্রিয়া সহজ করে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষকের সেই প্রশিক্ষণ নিয়মিত হয় না। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, প্রতিবেদনে উলিস্নখিত বিষয়গুলো আমলে নেয়া এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা। কেননা, প্রাথমিকে শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা অত্যন্ত পরিতাপের। বলা দরকার, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় এমন খবরও উঠে এসেছে যে, অনেক পরিবার শিশুদের স্কুলে পাঠাতে চান না, আবার শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে, শ্রেণি কক্ষের চেয়ে অনেক শিক্ষার্থী কোচিংয়ে নির্ভর হয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, প্রাথমিকে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যদি রিডিং পড়তে না পারা কিংবা অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা থাকে তবে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে করণীয় ঠিক করে সেই মোতাবেক শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই একদিন দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত না হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের অনুপাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যেটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নেয়ার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে যে, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জন তখনই যথাযথ হবে, যখন দক্ষ শিক্ষকের অভাব দূর হবে। আমরা মনে করি, সুশিক্ষা প্রদানে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভিভাবক সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার গুরুত্ব তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের অনিয়ম থাকলে সেটাও রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।