নারায়ণগঞ্জে গলা কেটে হত্যা

অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজ বাসায় এক মা ও তার দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুমাইয়া নামে আরেক শিশু আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, নিহত নারীর বোনের স্বামী মাদকাসক্ত আব্বাস এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দুই দিন আগে নাজনীনের সঙ্গে তার বোনের স্বামী আব্বাসের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় নাজনীন আব্বাসকে চড়থাপ্পড় মারেন। এ ঘটনার জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুচ্ছ কারণে বর্বরোচিত হত্যার ঘটনায় ভাঙছে অনেকের সুন্দর আর সাজানো সংসারও। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের সমাজে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ডের মতো জঘন্য অপরাধ ঘটে চলেছে একের পর এক। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে ভয়াবহ হত্যাকান্ড। পূর্ববিরোধ এমনকি প্রেমঘটিত কারণেও হত্যার ঘটনা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক-পারিবারিক কারণেই বেশিরভাগ হত্যাকান্ড ঘটছে। এছাড়া অর্থ, সম্পত্তি, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা রয়েছে। নারী-পুরুষের পাশাপাশি হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে শিশুরাও। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে বললেও বোধ করি অতু্যক্তি হয় না। নারায়ণগঞ্জের সাম্প্রতিক এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানা যায়, নিহত নাজনীনের বোন ইয়াসমিন আদমজী ইপিজেডে একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। তার স্বামী আব্বাস মিয়া মাদকাসক্ত। তিনি প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে মারধরের কারণে তাকে নিয়ে বুধবার রাতে ছোট বোন নাজনীনের বাসায় চলে আসেন। আব্বাসও রাতে এই বাসায় চলে আসেন। পরদিন সকালে ইয়াসমিন কারখানায় চলে যাওয়ার পর তাদের দাম্পত্য কলহের বিষয়গুলো নিয়ে শ্যালিকা নাজনীনের সঙ্গে বিবাদে জড়ান আব্বাস। এরপর তিনি তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করেন এবং নিজের মেয়ে সুমাইয়াকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান। নাজনীনের স্বামী সুমন সকাল ১০টায় বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ এবং আহত সুমাইয়াকে দেখতে পেয়ে সবাইকে খবর দেন। পুলিশ আব্বাসকে ধরতে অভিযানে নেমেছে এবং খুব দ্রম্নতই হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। উলেস্নখ্য, ছোট্ট কারণে মানুষ খুন হচ্ছে, খুন হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ। লুণ্ঠিত হচ্ছে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহজাত প্রবৃত্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীভৎস এসব খুনের কারণ একাধিক। বিচারহীনতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এর পেছনের অন্যতম কারণ। তেমনি রয়েছে সামষ্টিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিষয়টিও। অর্থনৈতিক বৈষম্য, প্রযুক্তির প্রতি অনিয়ন্ত্রিত মনোনিবেশ, ধর্মের অপব্যাখা, শিক্ষাব্যবস্থা, নৈতিক অবক্ষয়, প্রতিহিংসা, মাদকের প্রভাবসহ আরও অনেক কারণ রয়েছে নৃশংসতার নেপথ্যে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পশুত্ব প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে। শ্রেণি, লিঙ্গবৈষম্য, না পাওয়ার অতৃপ্তি, ঘৃণা মানুষের স্বাভাবিক সহজাত প্রবৃত্তিকে বাধাগ্রস্ত করে। বলাই বাহুল্য, তুচ্ছ কারণে এখন যত বীভৎস ঘটনা ঘটছে, ১০ বছর আগে তা ছিল না। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি বীভৎস ঘটনাকে আলাদাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে রাষ্ট্রকে। সর্বোপরি বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জের সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডের অপরাধীসহ অতীতের হত্যাকান্ডগুলোর যথাযথ বিচার করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে অপরাধীদের। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে যাদের মানবিক মূল্যবোধ কম তাদের এই বার্তা দিতে হবে যে, অপরাধ করলে সাজা নিশ্চিত। অপরাধ করে যে পার পাওয়া যাবে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে শৈথিল্য রয়েছে- এমন অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। প্রত্যাশা থাকবে, সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে অধিকতর তৎপর হবেন। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রের শিক্ষার মধ্যে নৈতিকতার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এমন আস্থা তৈরি করতে হবে যাতে মানুষ তাদের ওপর ভরসা রাখতে পারে।