মাছ উৎপাদনে সাফল্য

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ঢাকা
মাছ চাষে গত চার যুগে দেশের দক্ষিণাঞ্চল নীরব বিপস্নব সাধনের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এ বিপস্নবের বদৌলতে ওই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার সংস্থান হয়েছে। দেশের অর্থনীতির জন্য বয়ে এনেছে আশীর্বাদ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি ও সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার ৬ দশমিক ৮২১ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২২৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গলদা, বাগদা ও অন্যান্য চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ২৪ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। এ বাবদ অর্জিত হয়েছে ২১৭১ কোটি ১৭ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। হিমায়িত কার্পজাতীয় মিঠা পানির মাছ ও হিমায়িত পারশে, ক্যাট ফিশ, শুঁটকি ও অন্যান্য সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে আরও প্রায় ১১৮ কোটি টাকার। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চিংড়ি ও সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে ২৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২৪৮৮ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত এ অঞ্চল থেকে বছরে গড়ে ২৫২৪ কোটি টাকার মাছ বিদেশে রপ্তানি হতো। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির দরপতন ও বিদেশে ইলিশ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় রপ্তানির হার কিছুটা কমলেও মিঠা পানির মাছ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রজাতির মাছ রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে হেক্টরপ্রতি মাছ উৎপাদন দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ উদ্দেশ্যে মাঠপর্যায়ে চাষিদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি ও সাদা মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। গত অর্থবছরে খুলনা জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সাদা মাছ উৎপাদিত হয়। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন বেশি। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে খুলনায় উন্মুক্ত খাল ও সংযুক্ত বিলগুলোতে হেক্টরপ্রতি মাছের উৎপাদন ৭০০ কেজি। এ পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ ১৫০০ কেজিতে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। এটি সফল হলে মাছ রপ্তানি করে বেশি বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। মাছে-ভাতে বাঙালি ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে মাছের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ঘটনা। রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতিবছরই মাছের হিস্যা সন্তোষজনক হারে বাড়ছে। আর চলতি অর্থবছরে মৎস্য খাতের আয় দেশের মোট কৃষিজ আয়ের ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাছের উৎপাদন বাড়াতে বেসরকারি খাতকেও উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশে ১৪ লাখ নারীসহ প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ খাতে প্রতি বছর প্রায় ছয় লক্ষাধিক লোকের নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। ইতিপূর্বে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) প্রতিবেদনে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে। এ অগ্রগতির সব প্রশংসা মাছচাষি ও বর্তমান সরকারের গৃহীত নানা ইতিবাচক কর্মসূচিরই প্রাপ্য। এখন দেশে পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মাণের পাশাপাশি মাছচাষিদের সহজশর্তে ঋণদানের কথা ভাবতে হবে। মাছ-মাংস আমাদের রপ্তানি আয়েরও বড় উৎস হতে পারে। রপ্তানি তালিকায় চিংড়ি এসেছে বহু আগেই, যাকে আমরা এখন বলছি সাদা সোনা। উৎপাদন বাড়লে গতি পেতে পারে ইলিশ রপ্তানিও। আমাদের দেশীয় বাজার মূলত মিঠাপানির মাছনির্ভর। কিন্তু বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সামুদ্রিক মাছের। আমাদের সীমানায় এখন যোগ হয়েছে বিশাল সমুদ্র-অঞ্চল। বলতে গেলে দেশের মূল ভূখন্ডের প্রায় সমপরিমাণ আয়তনের সমুদ্রসীমা রয়েছে যেখানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, বিশেষ করে মৎস্য সম্পদ। এই মৎস্য সম্পদ আহরণ করা গেলে তা দেশে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বড় অবদান রাখতে পারবে।