মানব পাচার মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তি জরুরি

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বেকারত্বের যন্ত্রণা অসহনীয়, দেশেও ভালো একটি চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কর্মসংস্থানের আশায় বিপদ জেনেও অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিতে হবে। এ রকম অসচেতন কিংবা অপরিণামদর্শী মানুষকে নিবৃত্ত করার সামাজিক দায় প্রত্যেক নাগরিকের। মানুষ নিতান্তই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। অনেকে শেষ সহায়-সম্বল ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে। বিশেষ করে দালাল ও প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে যেসব পুরুষ, নারী ও শিশু শ্রমিক পাড়ি জমায় বিদেশে তাদের দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা অবর্ণনীয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কর্মসংস্থান হয় অতি নিম্নমানের ও মজুরির। প্রতারক দালালচক্র এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে। এ ক্ষেত্রে নারী ও শিশুর অবস্থান হয় আরও শোচনীয়। শিশুদের কাজে লাগানো হয় উটের জকি হিসেবে। আর গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মহিলারা ব্যবহৃত হয়ে থাকেন 'যৌনদাসী' হিসেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। ভূমধ্যসাগরে চাকরিসন্ধানীদের সলিল সমাধির খবর এসেছে। এসব করুণ উপাখ্যানের হতভাগ্য বাংলাদেশিদের উপস্থিতি উলেস্নখযোগ্য। কিন্তু দেখার বিষয় হলো- এসব রূঢ় বাস্তবতা সত্ত্বেও মানব পাচারের প্রকোপ কমছে না। মানব পাচার নিশ্চয় আর দশটি অপরাধের মতোই ঘৃণ্য। বাংলাদেশের মানব পাচারের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়েই সাত বছর আগে বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠনের বিধান করা হয়েছিল। অথচ বিচারকের স্বল্পতা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকার কারণেই এই ট্রাইবু্যনাল গঠন করা সম্ভব হয়নি। বিচারহীনতা রোধে হাইকোর্টের নিবিড় তদারকি দরকার। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবু্যনালকে মানব পাচার মামলা নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেয়া হলেও ট্রাইবু্যনালগুলোকে অনেক সময় সব ধরনের মামলা নিষ্পত্তিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এর অবসান দরকার। যেমন- এই মুহূর্তে ৬৪ জেলায় ৪ হাজারের বেশি মামলার মধ্যে তিন শতাধিক মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন। এতটা পুরনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুরাহায় নিম্ন আদালতকে বাধ্য করতে পারে হাইকোর্ট। মানব পাচারসংক্রান্ত অপরাধের দ্রম্নত বিচার সম্পন্ন করতে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে বিচারকসহ ৪৮টি পদ সৃজনে আইন মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের পর ট্রাইবু্যনাল গঠনের বাকি কাজ সম্পন্ন করবে আইন মন্ত্রণালয়। এসব ট্রাইবু্যনাল গঠনের পর মানব পাচারের ঘটনায় করা সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তির পথ খুলবে এমনটিই আশা করা হচ্ছে। স্মর্তব্য, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে পৃথকভাবে মামলা পরিচালনার জন্য বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠনের কথা বলা আছে। ২০১২ সালে আইন প্রণয়নের সাত বছর পর আলোর মুখ দেখছে এ ট্রাইবু্যনাল। বর্তমানে প্রতিটি জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালে মানব পাচারসংক্রান্ত মামলার বিচার পরিচালিত হয়। এসব ট্রাইবু্যনালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার চাপ বেশি থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানব পাচার মামলার বিচার। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ৬০১টি মানব পাচারের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭টি মামলা ঝুলছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। আটটি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৬৪টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭৯টি, রাজশাহী বিভাগে ২৩৫টি, খুলনা বিভাগে ৮৩৩টি, বরিশাল বিভাগে ৩৮৫টি, সিলেট বিভাগে ২২৬টি, রংপুর বিভাগে ৫৮টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১২১টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মানব পাচার দেশের সুনামের জন্য যেমন বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে তেমন লাখ লাখ মানুষ তথা পরিবারের জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইবু্যনাল গঠিত হলে মানব পাচার সম্পর্কিত মামলার দ্রম্নত বিচার সম্ভব হবে। বিলম্বিত বিচার যেহেতু বিচারহীনতার শামিল সেহেতু সে লজ্জা থেকে রেহাই পাওয়ারও সুযোগ ঘটবে। তবে মানব পাচারসংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ঢাকা