যুগান্তকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম হুমকি উলেস্নখ করে বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উপলব্ধি করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে চারটি প্রস্তাব উপস্থাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন, সুশাসন নিশ্চিতে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বক্তব্যে তুলে ধরেন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, এতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটেছে, মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। বলাই বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৪তম। এছাড়া সরকারের সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনাসহ অভ্যন্তরীণ এবং বিদ্যমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা সময়োপযোগী এবং যুগান্তকারী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, স্পেকটেটর ইনডেক্স ২০১৯ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ২৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। এ সময়ে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের ব্যাপ্তি ঘটেছে। যা ১৮৮ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা বেড়ে চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া উন্নয়ন কৌশল হিসেবে সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার ফসল বললেও বোধ করি অতু্যক্তি হয় না। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটই ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, একটি ক্ষুদ্র আয়তনের উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আশ্রিতদের সাধ্যমতো চিকিৎসা, নিরাপত্তা এবং শিশুদের যত্ন্নের বিশেষ ব্যবস্থাও করেছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিপুল এই জনগোষ্ঠী যে বিরাট একটি বোঝা, তা যে চোখেই দেখা হোক না কেন, বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। আর উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধান করতে হলে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অকুণ্ঠ সহযোগিতার বিকল্প নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের এ বিষয়টির ওপরই গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি উলেস্নখ করেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে না নিতে মিয়ানমার নানান অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে, যা নানান সময়ে আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে চলেছে, তা নিন্দনীয়। ফলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বিশ্বনেতাদের জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানসহ যে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সোচ্চার হলে, মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা গেলে বিষয়টির দ্রম্নত ও সুষ্ঠু সমাধান হওয়া অসম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বাস্তবতার কথাটিই বারবার উলেস্নখ করে আসছেন। আমাদের প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেয়া বঙ্গবন্ধুর 'এই দুঃখ দুর্দশা সংঘাতপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ মানুষের ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল'- বক্তব্যটি উদ্ধৃত করে আগামী বছর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আশাবাদের কথাও উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সর্বোপরি বলতে চাই, জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চার দফা প্রস্তাব উত্থাপনসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সামগ্রিক যে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন তা দিকনিদের্শনামূলক এবং দূরদর্শী। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিবেচনায় নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী এবছর 'ভ্যাকসিন হিরো' এবং 'চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ' সম্মাননা অর্জন আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিবাদন।