অস্থির পেঁয়াজের বাজার

দ্রম্নত কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার একদিন পরই পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠেছে। কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় যে পেঁয়াজ রবিবার বাজারে বিক্রি হয়েছে, সোমবার তা অনেক বাজারে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মূলত পেঁয়াজের দাম গত এক মাসে দ্বিগুণ হয়েছে। আর এসবই হয়েছে ভারত কয়েক দফায় পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার পর থেকে। বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানির পরও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও পেঁয়াজের বাজার অস্থির। হঠাৎ করে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম অধিকমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। আশার কথা, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পরদিন গত সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার কেজি পেঁয়াজ। কনটেইনারে করে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ খালাসের প্রক্রিয়া চলছে। মিসর ও চীন থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। \হআমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এবার কি পেঁয়াজের দাম কমবে? আর কমলে কত কমবে? ৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কি কম? বলা হচ্ছে, বাজারে সংকট থাকায় হু হু করে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। যা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। একইসঙ্গে টিসিবি খুচরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি, আমদানিকৃত পেঁয়াজের আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান না। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ পচে নষ্ট হয়ে যায়। এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, ভারতে বছরে দুইবার পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। একবার শীতকালে আর একবার গ্রীষ্মকালে। বাংলাদেশে শীতকালেই অধিকাংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে তেমন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় না বললেই চলে। যদিও গ্রীষ্মকালে চাষ করার মতো উন্নতজাতের বারি পেঁয়াজ-২ ও বারি পেঁয়াজ-৫ নামের দুটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে মসলা গবেষণা কেন্দ্র। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকারের উপায় নেই, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের এখন নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। রমজানের সময়ও দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২২ টাকা কেজি আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ১৮ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকারী কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। তাদের ঘরে এখন কোনো পেঁয়াজ মজুত নেই। দেশি পেঁয়াজ মজুত রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের গুদামে। তারা বিশেষ ব্যবস্থায় দেশি পেঁয়াজ কৃষকের কাছ থেকে কিনে মজুত করে রেখেছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আর কতদিন চলবে। এর আগেও তারা পেঁয়াজ ও চিনি নিয়ে এমন কারসাজি করেছিল। তখন পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ১৩০ টাকা কেজি। এবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এক কেজি পেঁয়াজের দাম যদি ১২০-১৩০ টাকা হয় তা হলে স্বল্প আয়ের মানুষ 'পেঁয়াজ কিনবে কী করে? যে করেই হোক সরকারকে দ্রম্নত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।' তবে সবার আগে অসৎ ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর ও কঠোর উদ্যোগই পারে জনগণতে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে।