বাংলাদেশ বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির কেন্দ্র হয়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নয়াদিলিস্নতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন নিয়ে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এবং ভারতের ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, গতানুগতিক খাতের বাইরে বাংলাদেশের শিক্ষা, হালকা শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিদেশি, বিশেষ করে ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করার এখনই সময়। সামাজিক মূল্যবোধ এবং জনগণের আস্থা বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল শক্তি উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণ ছাড়াও প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারের যোগাযোগের পথ হতে পারে বাংলাদেশ। আর প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আমাদের নেতৃত্বের অন্যতম শক্তি হচ্ছে উন্নয়নের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা, তাদের লড়াকু মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাস- উলেস্নখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, যা অস্বীকারের সুযোগ নেই। অন্যদিকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করার কৌশলও বাংলাদেশের আয়ত্ত্বে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয়ও দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি। এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী দিকনির্দেশনার ফলে। এছাড়া বাংলাদেশ বর্তমানে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনকারী দেশ। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ দেশ, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে পঞ্চম এবং মৎস্য উৎপাদনে চতুর্থ। বিভিন্ন শস্য ও ফলের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে এ খাতে দেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে বলে অর্থনৈতিক সামিটে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও রয়েছে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন। ২০০৯ সালের পর তৃণমূলের শতভাগ মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ যে উদার বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা জানি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১২টি অর্থনৈতিক এলাকায় কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এছাড়া ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে পৃথক দুটি অর্থনৈতিক এলাকা। এছাড়া বেশ কয়েকটি হাই টেক পার্কও প্রস্তুত হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে দেশ যেমন উন্নয়নের মহাসোপানে এগিয়ে চলেছে, তেমনইভাবে তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের গুরুত্ব ও সম্ভাবনার যে চিত্র তুলে ধরছেন তা দেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। আমরা লক্ষ্য করেছি, নয়াদিলিস্নতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তারাও বলেছেন, বাংলাদেশে অভূতপূর্বভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উলেস্নখ করে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে নেতৃত্বের রোল মডেল হিসেবে বর্ণনা করেন। আন্তর্জাতিক নেতাদের এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গৌরবের। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ জরুরি, এটা বিশ্লেষকরা অনেকবারই বলেছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলও বিষয়টি অবগত। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য জমি, বিদু্যৎ, গ্যাস সহজলভ্য, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে সরকার। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আইনি সুরক্ষা, উদার রাজস্ব ব্যবস্থা, মেশিনপত্র আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়, আনরেস্ট্রিকটেড এক্সিট পলিসি, সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ও পুঁজি নিয়ে চলে যাওয়ার সুবিধাসহ নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশে আগের তুলনায় বিনিয়োগও বাড়ছে। এটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক এবং সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আমরা মনে করি, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে বিশ্বের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।