কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক

ঋণের মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। বলার অপেক্ষা রাখ না যে, ব্যাংকিং খাতে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনার চিত্র পরিলক্ষিত হলে তা ভয়ানক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, উচ্চ মুনাফার প্রতিযোগিতার কারণে গুণগত মান বিবেচনা না করেই মরিয়া হয়ে ঋণ বিতরণ করছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ফলে এর পরিপ্রেক্ষিতে যেমন খেলাপি ঋণ বাড়ছে, তেমনি ব্যাপক হারে উচ্চ সুদহারকে উস্কে দিচ্ছে; এমন বিষয় খবরে উঠে এসেছে। আর এমতাবস্থায় ঋণের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে যে, বিতরণের আগে ঋণের মান যাচাই-বাছাই করতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংক আইন মোতাবেক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ব্যবস্থা নেবে। ঋণের মান খারাপ হওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ঋণের মান নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক যে নিদের্শনাগুলো দিয়েছে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। কারণ ঋণের মান খারাপ হওয়ার কারণে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা ব্যাংকিং খাতের জন্য আশঙ্কার- যা কাম্য নয়। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা নিয়েও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ঋণের মান খারাপ হওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে- এমন বিষয় যখন সামনে আসছে তখন এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত। আমলে নেয়া সমীচীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ঋণের মান এবং খেলাপি নিয়ে ২০-২২টি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করা হয়েছিল এবং তাদের খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ যাতে আর খুব বেশি না বাড়ে, তার জন্য ঋণ বিতরণের আগে ঋণের মান যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংক আইন মোতাবেক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ব্যবস্থা নেবে। আমরা মনে করি, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ঋণের মান যাচাই-বাছাই করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত যে চিত্র বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে তা এড়ানোরও কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, আমরা এটাও উলেস্নখ করতে চাই, চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকের ঝুঁকি, জালিয়াতি ও খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্দেশ্য মন্দ গ্রাহকরা ব্যাংক ঋণ পাবেন না, অন্যদিকে ভালো গ্রাহকরা চাহিদামতো ঋণ পাবেন। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মান বিবেচনা করাসহ কিছু নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে- যা ইতিবাচক। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ঋণের মান নিয়ন্ত্রণে যে সব নিদের্শনা দেয়া হয়েছে তার যথার্থ বাস্তবায়ন হোক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, ঋণের মান খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে দুর্নীতি। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়েও উদ্যোগী হতে হবে। উচ্চ মুনাফার প্রতিযোগিতার কারণে গুণগত মান বিবেচনা না করেই মরিয়া হয়ে ঋণ বিতরণ করবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো- এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগনজক। সঙ্গত কারণেই ঋণের মান নিয়ন্ত্রণসহ সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের যে কোনো ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।