হ্যালো লিডার হ্যালো মিনিস্টার

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি

যেহেতু রাজনীতি দিনে দিনে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ব্যবসায়ী ও আমলা-কামলাদের হাতে চলে যাচ্ছে সেহেতু এই গোষ্ঠীটি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নীলনকশা করে দেশের রাজনীতিকে পঙ্গু করতে চাইছে কি না সেটা বিবেচনায় নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আজ যখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সতর্কতা এবং দেশবাসী জেগে ওঠার কারণে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ছাত্র রাজনীতিতে কোণঠাসা, তখন সে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা নেপথ্যে থেকে কোনো খেলা খেলছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে রাজনীতির খলনায়করা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সুবাদে ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কি না তাও ভেবে দেখা দরকার।

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

সোহেল হায়দার চৌধুরী
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের সূত্র ধরে দেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত-অমত চলেছে বেশ ক'দিন। আবরার হত্যাকান্ডের বিষয়টি বুয়েটের শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। ৬ অক্টোবর রাতে সংঘটিত এ ধরনের নৃশংসতম বিরল ঘটনা আবারও প্রমাণ করল বিবেকবান মানুষ গড়ে তোলার জন্য শুধু শিক্ষা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট নয়। পাবিরারিক-সামাজিক, সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে একজন সু-মানুষ গড়ে ওঠে। তবে এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের আইন ও বিচারের আওতায় আনতে যে শূন্য সহিষ্ণুতা লক্ষ্য করা গেছে সরকারের পক্ষ থেকে তা মানুষকে আশান্বিত করে তুলেছে। একই সঙ্গে এ ঘটনার সূত্র ধরে বুয়েটে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়াও এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় যারপরনাই খুশি হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এতে কি সঙ্কটের সুরাহা হবে? এটা কি মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো বিষয় হলো না? তাছাড়া সংবিধান পরিপন্থি এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত তাও বিবেচনার দাবি রাখে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে গত ৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনেও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিপক্ষে তার মত দেন। একই সঙ্গে তিনি এও উলেস্নখ করেন যে, বুয়েট কর্তৃপক্ষ চাইলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। সেই সঙ্গে তিনি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও হলে নিয়মিত তলস্নাশির উপরও গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই 'সবুজ সংকেত'র সূত্র ধরে বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সংগঠন ছাড়া রাজনীতি কি সম্ভব? বাংলাদেশে কার্যকর যে রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা সবাই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। সেসব সংগঠনের অন্যান্য যে উইং রয়েছে তারাও নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র মেনে পরিচালিত হয়। শুধু অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির নিবন্ধিত কার্যকর সাংগঠনিক কাঠামোহীন বলা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের চেয়ে কম শক্তিশালী নয়, মৌলবাদী জামায়াত-শিবির ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। নানা মাধ্যম জানিয়েছে, বুয়েটসহ সব প্রকৌশল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মেডিকেল কলেজে শিবির ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ভিড়ে গেছে। আবরার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন আগে জামায়াত-শিবির চক্রের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও এ অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগ সম্পৃক্তরা এ হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারবে না। একটি সংগঠনে ভিন্ন আদর্শ ও মতবাদের সুবিধাবাদী চক্রের কেউ সম্পৃক্ত হলে সেটা 'অনুপ্রবেশকারী' বলে চালানোর সুযোগ নেই। 'অনুপ্রবেশকারী' চিহ্নিত করতে না পারাটাই একটি সংগঠনের নেতৃত্বের ব্যর্থতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কোনো সমাধান নয়, মাথাব্যথা বলে মাথা কেটে সমস্যার সমাধান করা না। বরং মাথাকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। আমার মনে হয়, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার। আমার কাছে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি বা ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বুয়েটে নিষিদ্ধ করা অসঙ্গত মনে হয়েছে আরেকটি কারণে। এ দাবির পেছনে বিশেষ কোনো মহলের ইন্ধন বা সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। যেহেতু দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ প্রভাবশালী অবস্থানে, সেহেতু ছাত্রলীগ বিরোধী পক্ষগুলো আদর্শ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য জলাঞ্জলি দিয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের উস্কানি দিয়ে 'নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা' তত্ত্বে কাজ করছে কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমস্যা-সঙ্কটে ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন, ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, জিয়া ও এরশাদের শাসনামল, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, দেশব্যাপী মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বিরোধী আন্দোলন কোথায় নেই ছাত্রলীগ বা প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এই ইতিহাসকে ঝেড়ে ফেলতে কোনো মহল ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চাইছে কি? যেহেতু রাজনীতি দিনে দিনে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ব্যবসায়ী ও আমলা-কামলাদের হাতে চলে যাচ্ছে সেহেতু এই গোষ্ঠীটি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নীলনকশা করে দেশের রাজনীতিকে পঙ্গু করতে চাইছে কি না সেটা বিবেচনায় নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আজ যখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সতর্কতা এবং দেশবাসী জেগে ওঠার কারণে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ছাত্র রাজনীতিতে কোণঠাসা, তখন সে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা নেপথ্যে থেকে কোনো খেলা খেলছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে রাজনীতির খলনায়করা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সুবাদে ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কি না তাও ভেবে দেখা দরকার। এটা সত্য যে, মূল দলের লেজুড়বৃত্তির সূত্র ধরে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত কয়েক দশকে নানা অপকর্ম করেছে। আবার প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের রগ কাটার মহোৎসবও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। রগ কাটা বাহিনীকে নিষিদ্ধ করতে তখন কারা কারা মত দিয়েছেন সেটাও আজ খোঁজ নেয়া দরকার। অথবা সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ ছাড়া কারা কারা লড়াই করেছে বা কোন কোন ছাত্র সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারও তালিকা প্রকাশ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নানা অপকর্ম-অনিয়ম আর হামবড়া ভাব প্রকাশে অনেকেই ক্ষুব্ধ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদত্যাগে বাধ্য করার পরে এ আস্থা অন্তত রাখা যায় যে, অনিয়ম-দুর্নীতি বা অপরাধ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছাড় পাওয়ার দিন আপাতত শেষ। আবরার হত্যাকান্ডের পরে দ্রম্নত আইনিব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আবারও প্রমাণ করে তিনি অপকর্মের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতৃত্বে থাকা অপরাধী ও অপকর্মকারীদের তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন তা জনপ্রিয় অন্য কোনো দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেখাতে পারেননি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শেখ হাসিনাই ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের হাতে রাখার গুরুত্ব অনুভব করেন প্রথম। সেজন্য ছাত্রদের নেতৃত্বের বয়সসীমা বেঁধে দেন তিনি। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে সেটি গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা হতো। বিএনপি-জামায়াত আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার 'ছাত্রলীগকে প্রতিরোধ করতে ছাত্রদলই যথেষ্ট' কথাটির পরে শাপলা চত্বরে এক ছাত্র মহাসমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাত্রদের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে বলেছিলেন। আজও শেখ হাসিনা সেই একই অনুভূতি পোষণ করেন। এখনো তিনি ছাত্রদের রাজনীতির পাশাপাশি লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারপরও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশ বিপথে পরিচালিত হয়েছে সেটা সত্যি কথা। সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে কিনা তাই বিবেচনার বিষয়। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেয়া যায়। আমার মনে হয়, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে এর সংস্কার এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সময়োপযোগী হবে। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের যে অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে তা ম্স্নান করতে এর আগে দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নানা প্যাকেজ পরিকল্পনা হাতে নিতে দেখা গেছে। কিন্তু ছাত্রসমাজ সব নীলনকশা ভেস্তে দিয়ে ঐহিত্য ও সংগ্রামের গৌরবগাথা সমুন্নত রেখেছে। সেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাওয়া কখনোই প্রত্যাশিত নয়। বরং এটিকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে হবে। এজন্য কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। ১. ছাত্র সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পদে থাকা প্রতিটি নেতার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাই এখনই শুরু করা দরকার। এ ক্ষেত্রে তার পরিবারের সদস্যরা কে কোন আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বা কার কি পেশা তাও যাচাই করা যেতে পারে। ২. দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে থাকাদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে তদন্ত করা যেতে পারে। ৩. ছাত্রলীগের প্রতিটি স্তরে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে 'অনুপ্রবেশকারী' চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা দরকার। একই সঙ্গে আসন্ন কাউন্সিলে 'অনুপ্রবেশকারী' ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ৪. বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন। সেই পরিচিতি অনুষ্ঠানে নেতারা যেমন তাদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবেন তেমনি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও তাদের প্রত্যাশার কথাটি উলেস্নখ করা যেতে পারে। ৫. প্রতি মাসে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বৈঠক করতে পারেন। সে বৈঠকে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানবিষয়ক আলোচনায় যা উঠে আসবে তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। ৬. প্রতি তিন মাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের আয়োজনে এসব বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা-সঙ্কট নিয়ে বলবেন। ছাত্রনেতারা তাদের বক্তব্য রাখবেন। যেসব সমস্যা-সঙ্কটের কথা উঠে আসবে সেগুলো পর্যালোচনাপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ৭. ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের নিয়মিত ক্লাস বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরীক্ষা বা অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণও বাধ্যতামূলক করা দরকার। ৮. প্রতিটি ক্যাম্পাসে চিহ্নিত প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ছাড়া সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করা দরকার। ৯. বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে নানা ধরনের প্রকাশনা, বিতর্ক, বিনোদনমূলক কর্মকান্ড, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এসব প্রতিযোগিতায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। ১০. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতারা কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা হলগুলোতে নিয়মিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও সম্পর্কোন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিতে পারেন সামর্থ্য অনুযায়ী। আমার বিশ্বাস, উলিস্নখিত বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আমলে নেয়া হলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে। যারা ছাত্র রাজনীতিকে ঘৃণা করেন তারাও যদি ইতিবাচক কিছু দেখেন তবে ছাত্র রাজনীতিই আখেরে উপকৃত হবে। বর্তমান বাস্তবতায় ছাত্র শিবির বা ধর্মীয় উন্মাদনায় বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠন ছাড়া প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহাবস্থান খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর এ কাজটি বাস্তবায়ন সম্ভব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা নিয়মিত (তার সুবিধামতো) যদি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তাহলে ক্যাম্পাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রনেতাদের মধ্যে যেমন আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি হবে তেমনি ছাত্রসমাজ উপকৃত হবে। ছাত্রলীগসহ সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনকে বিনি সুতার মালায় আবদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। সে ক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বড় সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে আধিপত্য বা কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা পরিহার করে ছাত্রদের সমস্যা-সঙ্কট নিরসনে সতীর্থ প্রগতিশীল সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের থাবা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে হলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের গৌরবের অংশী প্রগতিশীল সব ছাত্র সংগঠনের আদর্শিক ও ইসু্য ভিত্তির ঐক্য আজ খুব জরুরি। সোহেল হায়দার চৌধুরী: বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক যায়যায়দিন, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)