শিশুর ওপর পৈশাচিকতা

জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পাঁচ বছরের ছোট্ট একটা শিশু তুহিন মিয়া, তার ওপর এমন নৃশংসতা কেউ চালাতে পারে, এটা যেন বিশ্বাস করা কঠিন। কদমগাছের ডালে ঝুলছিল শিশুটির রক্তাক্ত নিথর দেহ। গলায় রশি বাঁধা পেটে ঢোকানো লম্বা ছুরি। আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, এখানেই ঘটনার শেষ নয়- শিশুটির গলা কেটে হত্যার পর দুটি কান ও পুরুষাঙ্গটিও কেটে নেয়া হয়েছে। এই ঘটনা যেন বর্বরতার চূড়ান্ত পর্যায়কেই স্পষ্ট করে। এমন নৃশংসতা যেন আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়। একটা শিশু যদি এমন ঘটনার শিকার হয়- তবে এর ভয়াবহতা কীরূপ তা বলার মতো ভাষাও যেন নেই। আর এমন নজিরবিহীন বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে। আমরা বলতে চাই, যখন দেশে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে এবং নানা ধরনের অপরাধ থেমে নেই তখন এটাও স্পষ্ট যে, এসব ঘটনা সামগ্রিক উন্নয়ন ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনের জন্য পরিপন্থি। আর এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি যেমন খতিয়ে দেখতে হবে, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প থাকতে পারে না। এবারে শিশু তুহিন হত্যার ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে যে ঘৃণ্য ও বর্বরতা স্পষ্ট হচ্ছে তা যেমন বিস্ময়কর, তেমনি এর ভয়াবহতাও অকল্পনীয়। প্রসঙ্গত আমরা এটাও বলতে চাই, বর্তমান সময়ের দিকে দৃষ্টি দিলে, যেসব অপরাধের চিত্র ভেসে ওঠে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। কেননা পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যায় একের পর এক খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ছিনতাইসহ নিত্য-নতুন উপায়ে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় পাঁচ বছরের এই শিশু তুহিন মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরও যে ভয়ঙ্কর বিষয় সামনে আসছে- এই নৃশংস হত্যায় তার পরিবারের লোকজন জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুহিনের বাবা আবদুল বাছির, চাচা, চাচি ও এক চাচাতো বোনকে থানায় আনে পুলিশ। এরপর টানা কয়েক ঘণ্টা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তথ্য মতে জানা গেছে, গ্রামের অন্যদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে আবদুল বাছিরের পরিবারের বিরোধ ও মামলা রয়েছে। এর জের ধরেই অন্যদের ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই ঘটনার মধ্যদিয়ে কত বেশি হিংস্র ও ঘৃণ্য মানসিকতা সামনে আসছে তা ভাবনাতেও যেন নাগাল পায় না। আমরা মনে করি, যত দ্রম্নত সম্ভব এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তেমনিভাবে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নিতে হবে যে, এ ধরনের নৃশংসতার ঘটনা কীভাবে ঘটাতে পারে মানুষ! কীভাবে এতটা বর্বর হতে পারে! এ ধরনের বিষয়গুলোকে সামনে রেখেও করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের সমাজে এমন বর্বরতা রোধ করা না গেলে বসবাসের স্বাভাবিকতাই নষ্ট হবে। যখন বলা হচ্ছে আমরা সভ্য সময়ের মানুষ- তখন এমন ঘটনা ঘটছে- যা আদিম বর্বরতাকেও যেন হার মানায়। পুলিশ বলেছে, কারা, কখন, কীভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা সব জানা গেছে। এ ছাড়া রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানও বলেছেন, 'এমন বর্বরতা আগে কখনো দেখিনি। দোষী ব্যক্তিদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।' সর্বোপরি আমরাও বলতে চাই, এই ঘটনাটিকে আমলে নিন এবং যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে কঠোর শাস্তির আওতায় আনুন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে- প্রতিনিয়ত হত্যার ঘটনা ঘটছে- যেখানে নিরপরাধ শিশুকেও চলে যেতে হচ্ছে না ফেরার দেশে। এসব ঘটনা যে কোনো মূল্যে রোধ করতে হবে। সুশিক্ষার বিস্তার, মূল্যবোধ জাগ্রত করা, পারিবারিক কলহ রোধে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। একজন নিরপরাধ শিশুকেও যখন ঘৃণ্য ও হিংস্রতার শিকার হতে হয়, এমন নৃশংসতা নেমে আসে শিশুর ওপর- তখন এর ভয়াবহতা কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।